প্রতিবন্ধী শিশু নিপীড়নের খবরাখবর

বিগত বছরের তুলনায় প্রতিবন্ধী শিশুর যৌন নিপীড়নের শিকার হওয়ার ঘটনা বেড়েছে। এজন্য আইনি দুর্বলতা, পারিবারিক অসচেতনতা ও দায়িত্বশীলতার অভাবকে দায়ী করা হচ্ছে।
প্রতিবন্ধী শিশু নিপীড়নের খবরাখবর

বাংলাদেশের প্রতিবন্ধী শিশুদের প্রকৃত সংখ্যা জানা না গেলেও, বিভিন্ন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের হিসাব মতে দেশে প্রায় ৫০ থেকে ৬০ লাখ প্রতিবন্ধী শিশু রয়েছে।

প্রতিবন্ধীতার এই অসহায়ত্বকে পুঁজি করে পাষণ্ডরা নানা সময় ঝাঁপিয়ে পড়ে তাদের উপর। পত্রিকা খুললেই চোখে পড়ছে এসব বর্বরতার খবর।  

চলতি বছরের মার্চ মাসে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জে এক প্রতিবন্ধী কিশোরীকে শারীরিক নিপীড়নের অভিযোগে এক যুবককে আটক করে পুলিশ। এ ঘটনার দুই মাসের মাথায় ময়মনসিংহ থেকে আসে আরেকটি খবর। মুক্তাগাছায় ১১ বছর বয়সী প্রতিবন্ধী শিশুকে শারীরিক নিপীড়নের সাতদিন পেরিয়ে যাওয়ার পরও মামলা নেয়নি পুলিশ।

একই মাসে ফরিদপুরের মধুখালীতেও নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। এখানেই শেষ হয়নি। এক মাসের মাথায় আরেকটি সংবাদ পাওয়া যায়। জয়পুরহাটে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী এক শিশুকে শারীরিক নিপীড়নের অভিযোগে এক যুবককে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রেশ না কাটতেই অগাস্টে অভিযোগ ওঠে সাভারে। বিরুলিয়ায় নিপীড়নের শিকার হয় আরেক প্রতিবন্ধী শিশু।

স্থানীয় পুলিশ ফাঁড়ির এসআই জানান, এ ঘটনায় শিশুর মা তার প্রতিবেশী আব্দুল জব্বারের (৫২) বিরুদ্ধে মামলা করেছেন।

দুই মাস পর অক্টোবরে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় বাকপ্রতিবন্ধী এক শিশুকে নিপীড়নের অভিযোগ ওঠে। একই মাসে পিরোজপুর সদর উপজেলার আরেকটি ঘটনা যোগ হয় এই ক্রমধারায়। বুদ্ধিপ্রতিবন্ধী কিশোরীকে নিপীড়নের অভিযোগে মামলা হয় ৬০ বছর বয়সী এক ব্যক্তির নামে। একের পর এক নিপীড়নের খবর এ বছরেই শুধু আসেনি। পূর্বেও এসেছে, তবে ঘটনার সংখ্যা এখন বেড়েছে।

জরিপে চোখ বুলালে তার একটি ধারণা পাওয়া যাবে। বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৬ সালে জানুয়ারি থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৩১ জন প্রতিবন্ধী শিশু যৌন নিপীড়নের শিকার হয়েছে। আর এ বছর একই সময়ে নিপীড়নের শিকার হয় ৩৭ জন। ২০১৫ সালে এই সংখ্যা ছিল ২৩ জন। গত বছর তা বেড়ে দাঁড়ায় ৪২ জনে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে আসা বিগত দুই বছরের এ বিষয়ক খবরগুলো বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, প্রতিবন্ধী শিশুদের যৌন নিপীড়নের বেশিরভাগ ঘটনা ঘটেছে রাজধানী ঢাকার বাইরে। আরও লক্ষ্য করা গেছে, সন্দেহভাজন হিসেবে গ্রেপ্তারকৃত কিংবা হাতেনাতে ধরা পড়া ব্যক্তি বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই ভুক্তভোগী শিশুর প্রতিবেশি।

প্রতিবন্ধী শিশুর ক্ষেত্রে দেখা গেছে, সে অপরাধীকে শনাক্ত করতে পারছে না। দৃষ্টিপ্রতিবন্ধী শিশুর ক্ষেত্রে যেটা বেশি হচ্ছে। এ বিষয়গুলো নিয়ে কথা হয়েছে আড়াইশোর বেশি মানবাধিকার সংগঠনের জোট বাংলাদেশ শিশু অধিকার ফোরামের পরিচালক আবদুছ সহিদ মাহমুদের সঙ্গে।

তিনি হ্যালোকে বলেন, “সামগ্রিকভাবেই তো শিশুদের অধিকার লঙ্ঘন ও নির্যাতনের পরিস্থিতি দিন দিন খারাপ হচ্ছে। প্রতিবন্ধী শিশুরাও তো তার বাইরে নয়। সেদিকটা থেকে প্রতিবন্ধী বলে তারা আরো বেশি নিপীড়নের শিকার হচ্ছে। যেই মাত্রাটা দিন দিন বাড়ছে।”

“এই সংকট কাটিয়ে উঠতে আইনি দুর্বলতাকে শক্তিশালী করতে হবে। এখানে পরিবারের সচেতনতাও জরুরি। প্রতিবন্ধী বলে শিশুটিকে অবহেলা করা যাবে না। তাছাড়া আশেপাশের মানুষকেও দায়িত্বশীল হতে হবে। এ ধরণের ভায়োলেন্সের ক্ষেত্রে যে যার জায়গা থেকে প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।”

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com