সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হোক বাংলাদেশ

বিশাল এই পৃথিবীতে মানুষ নানান জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম, বর্ণ ও সম্প্রদায়ে বিভক্ত। এই বিভাজন দেশ ভেদে কম এবং বেশি। কিন্তু এমন কোনো দেশ খুঁজে বের করা কষ্টকর হবে, যেখানে একাধিক জাতি, গোষ্ঠী, ধর্ম, সম্প্রদায়ের অস্তিত্ব নেই। কিন্তু স্বপ্ন একটাই, সব ভেদ ঘুচে যাক! সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হোক বাংলাদেশ!
সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত হোক বাংলাদেশ

ইতিহাস থেকে জানা যায়, জাতি বিভেদের জটিলতায় শুরু হয় হানাহানি, বিদ্বেষ, যুদ্ধ ও প্রাণনাশ। কারণ প্রায় সব দেশেই  সংখ্যা গরিষ্ঠরা সংখ্যালঘুর ওপর  চালায় অত্যাচার। এমনকি, নিতান্ত ব্যক্তিগত যে ধর্মপালন, সেখানেও চলে আগ্রাসন।এগুলো ছাড়াও মূল যে কারণ, সেটা হলো রাজনীতির নেতিবাচক দিকগুলো।   

এই উপমহাদেশে ১৯৪৬ সালে যে দাঙ্গা হয় সেটা যে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছিল, সেটা নিয়ে কোনো বিতর্ক চলতেই পারে না।  

লেখক হারুন-অর রশীদ ও সুরঞ্জন দাসের লেখা  পড়ে জানলাম ১৯৪৬-এর আগে ১৯১৮ ও ১৯২৬ সালেও কলকাতায় হিন্দু-মুসলিম সংঘর্ষ চলাকালে উগ্রতার বিষয় ছিল প্রধানত শ্রেণিগত ও ঔপনিবেশিক নিপীড়নের প্রতীকসমূহ।  

এ দাঙ্গায়, যারা নিত্য প্রয়োজনীয় ভোগ্যবস্তুর দাম হঠাৎ করে বাড়িয়েছে, এমন সব দোকানে লুটপাট হয়েছে। কিন্তু ১৯৪৬ সালের দাঙ্গায় যে কোনো দোকান আক্রমণের শিকার হয়েছিল। এমনকি নারীরাও লাঞ্ছিত হয়েছিল।   

১৯৪৬ সালের হত্যাযজ্ঞের আরেকটি অভিনব ব্যাপার ছিল, ছোটো ছোটো দলে ভাগ হয়ে তারা আক্রমণ ও হত্যা করত। এখানে জোর দেওয়া হতো প্রতিশোধ নেওয়া ও শত্রুর শারীরিক ক্ষতি করার ওপর।   

আমি এত কথা লিখছি এই কারণে যে আমাদের জন্মের বহু বহু বছর আগে যে সব ঘটনা ঘটে গেছে, তার রেশ যেন এখনও কিছু কিছু রয়ে গেছে।

তবে আশার কথা, কিছু বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া এখন আমাদের দেশের নানান ধর্মাবলম্বীর মানুষের বিভিন্ন উৎসবের সময় আমরা এই বিভেদ ভুলে আনন্দে মেতে উঠি।

সম্প্রতি সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সব চেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা  শেষ হলো রোববার। সে সময়ের আনন্দ প্রায় সব মানুষকেই স্পর্শ করেছে।

শুধু পূজা নয়, ঈদ, বড়দিন, বুদ্ধপূর্ণিমা এমন অনেক উৎসবেই এখন একসাথে মেতে উঠেন এদেশের মানুষেরা। 

সময় হয়েছে অতীত ভুলে এখন নতুন প্রজন্মের সজাগ হওয়ার। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় সবচেয়ে বেশি ভূমিকা পালন করতে পারেন তরুণ প্রজন্ম। তারা যদি এগিয়ে এসে বলেন, আর একজন ভিন্নধর্মীও লাঞ্ছিত হবে না, আর একটা মন্দির, মসজিদ বা প্রতিমা ভাঙবে না। মুসলিম বলেই তাকে জঙ্গি বা উগ্রপন্থী ভাববে না। হিন্দু বলেই তাকে কান ধরে ওঠবস করানো হবে না, তাহলে একদিন হয়ত ভবিষ্যতের মানুষ অসাম্প্রদায়িক একটি  দেশ পাবে।

তাই স্বপ্ন দেখি, সব ধর্মের মানুষের মিলনে সম্প্রীতির এক অনন্য দৃষ্টান্ত হোক আমাদের এই বাংলাদেশ।

আর খুব বেশি দেরি হয়নি,  সবাইকে শারদীয় দুর্গাপূজার শুভেচ্ছা জানানোর!  

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com