বানভাসি মানুষের ক্ষয়-ক্ষতির 'খতিয়ান'

বন্যার পানি সরে গেছে। যাচ্ছে। তাহলে কী বন্যার্ত মানুষের সংকট শেষ হয়ে গেছে? কোথায় কত মানুষ কত ক্ষতির মধ্যে বেঁচেছে, মরেছে তার খতিয়ান আমরা কজন জানি?
বানভাসি মানুষের ক্ষয়-ক্ষতির 'খতিয়ান'

জলের ভেতর বানভাসি মানুষের সংকট একরকম। আর পানি সরে যাওয়ার পর সে সব মানুষের সংকটই বেড়ে কতগুণ হয়, আমরা ডাঙার মানুষ তা বুঝি না। বুঝলেও গা করি না তেমন।

তাই তাদের সেই কষ্টের খানিক ভাগ করে নিতে তুলে ধরছি নানান গণমাধ্যমের  খবর থেকে পাওয়া তথ্য।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রনালয় ও দুর্যোগ অধিদপ্তরের তথ্য অনুসারে অগাস্টের ২৪ তারিখে পাওয়া তথ্য অনুসারে তার আগের দুই সপ্তাহে ৩২ জেলার ৭৪ লক্ষ ৮২ হাজার ৬৩৭জন মানুষ বন্যার ক্ষয়ক্ষতির শিকার। এর মধ্যে ২০ জেলায় ঘটেছে মৃত্যুর ঘটনা। মারা গিয়েছেন ১৩২ জন।    

দেশের ৬৪ জেলার মধ্যে ৩২ জেলার ২০১ টি উপজেলা ও ৫১ টি পৌরসভার মানুষ বন্যাদুর্গত। প্রায় তিন লক্ষ মানুষ বন্যার পানিতে সব হারিয়ে হয়েছে নিঃস্ব। ৭৫ হাজার ৩৩১ টি ঘর বিলীন করে দিয়েছে এ বন্যা। সম্পূর্ণ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ১০ হাজার ৫৮৩ হেক্টর জমি। এছাড়া অনেক ঘর-বাড়ি ও জমি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এ তথ্যতেই বোঝা যায় কতটা প্রলয়ঙ্করী ছিল এবারের বন্যা।

জীবনের চাকা যেন থমকে গেছে বন্যাদুর্গত এলাকাবাসীর। কেউ হারিয়েছে ঘর-বাড়ি, কেউ গবাদি পশু। আবার কেউ হারিয়েছে স্বজন। ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বহু টিউবওয়েল। তাই তীব্র আকার ধারণ করেছে খাবার আর বিশুদ্ধ পানির সংকট। বন্ধ হয়েছে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর কার্যক্রম। অসংখ্য বিদ্যালয়ে পাঠদান ছিল বন্ধ।

যাতায়াতকে দুঃসাধ্য করে তুলেছে এ বন্যা। সারাদেশের ৭ হাজার ১৩০ কিলোমিটার রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জামালপুর জেলার সড়ক। জামালপুরে বন্যার পানিতে ডুবে এক শিশুর মৃত্যুও ঘটেছে। নিখোঁজ হয়েছে এক শিশু। গাইবান্ধায় মৃত্যু হয়েছে ১৩ জনের। সেখানকার সাদুল্লাপুরে বাঁধ ভেঙে ঘাঘট নদীর পানিতে তলিয়ে গেছে ১০ গ্রাম। মৃত্যু হয়েছে দুই শিশুর। ২৭ হাজার ১৬৭ হেক্টর জমির ফসল নষ্ট হয়েছে সেখানে। পাঁচ লাখেরও বেশি মানুষ বন্যার ভোগান্তি পোহাচ্ছেন। মুন্সীগঞ্জ জেলার ২৫ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে বন্যায়।   

কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, রংপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোণা, রাঙামাটি, নীলফামারী, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, দিনাজপুর, জামালপুর, ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, ময়মনসিংহ, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, রাজবাড়ী, নওগাঁ, জয়পুরহাট, যশোর, মৌলভীবাজার, ফরিদপুর, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, মাদারীপুর, মুন্সীগঞ্জ, নাটোর, চাঁদপুর, কুমিল্লা, ঢাকা, শেরপুর জেলার বিস্তীর্ণ জনপদ এই দফায় বন্যার কবলে পড়েছে।

বুধবারের খবর পাওয়া পর্যন্ত নওগাঁতে দেড় হাজার কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। ৫৮১ টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। ৯৬ হাজার ৬২৫ পরিবার ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। ৯৩ হাজার ৪০০ বাড়িঘর ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ৩২ হাজার ৬৩৭ হেক্টর জমির রোপা আমন, ১১ হাজার ২৪৩ হেক্টর জমির আউশ ও ১৯৫ হেক্টর জমির শাকসবজি নষ্ট হয়েছে।

কয়েক বছর পরপরই বন্যার কবলে পড়তে হয় এসব জেলার মানুষদের। অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটাতে হচ্ছে তাদের। হাওড়বাসীর দুর্ভোগটাও অনেক পুরনো। এর আগে অকাল বন্যায় ভেসে গেছে অনেক আবাদী জমি। কৃষকরা হয়েছেন ভূমিহীন।  

এ খতিয়ানের হিসাব, বন্যার্ত মানুষের কষ্টের হিসাবকে কতটুকু তুলে ধরতে পেরেছে জানি না, তবে লিখতে গিয়ে আমিও কষ্ট কম পাইনি!

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com