নিপাত যাক গৃহকর্মী নির্যাতন

অভাব-অনটনের কারণেই শৈশবেই গ্রাম থেকে শহরে এসে গৃহকর্মী হিসেবে কাজ নেয় বাংলাদেশের অনেক শিশু। এরা স্কুলে যেতে পারে না। বাবা-মাসহ পরিবারের সাথে থাকতে পারে না। কাজ করতে হয় অন্যের বাড়িতে।
নিপাত যাক গৃহকর্মী নির্যাতন

গৃহকর্মী হিসেবে কাজ করতে গিয়ে বাড়ির মালিকদের হাতে প্রায় সময়ই নির্যাতনের শিকার হওয়ার ঘটনা পত্রিকার পাতায় সংবাদ হিসেবে ছাপা হয়।

গৃহকর্ত্রীর হাতে পাশবিক নির্যাতনে অল্পের জন্য বেঁচে যাওয়া শিশু গৃহকর্মীদের একজন আদুরী। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম ও বিবিসি’র প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, পটুয়াখালী সদর উপজেলার কৌরাখালি গ্রামের মেয়ে আদুরি তার বাবা-মায়ের সপ্তম সন্তান।

আদুরীর বাবা মারা গেলে নয় ভাই-বোনকে নিয়ে সংসার চালাতে কিছুটা বিপদে পড়েন মা শাফিয়া। তখন এলাকার চুন্নু মীর নামে এক ব্যক্তি ঢাকায় তার শ্যালক সাইফুল ইসলাম মাসুদের বাসায় মাসিক ৫০০ টাকা বেতনে আদুরিকে কাজ দেওয়ার প্রস্তাব করলে তার মা শাফিয়া রাজি হয়ে যান।

বিবিসি’র প্রতিবেদনে পুলিশের তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী রাজধানীর পল্লবীর ১২ নম্বর সেকশনের যে বাসায় কাজ করতে দেয়া হয়েছিল আদুরীকে সে বাসার গৃহকর্ত্রী নওরীন জাহান নদী ধারালো চাকু দিয়ে কেটে আর গরম ইস্ত্রি দিয়ে ছ্যাঁকা দিয়ে ক্ষতবিক্ষত করে আদুরীর শরীর। তখন তার বয়স ছিল মাত্র ১১বছর। পরে  মারাত্মক জখম অবস্থায় আদুরীকে মৃত ভেবে ফেলে দেয়া হয় ডাস্টবিনে।

২০১৩ সালের ২৩ সেপ্টেম্বর আদুরিকে ডাস্টবিন থেকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধারের তিন দিন পর পল্লবী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেন আদুরির মামা নজরুল চৌধুরী।পরে আদালতে গিয়ে গৃহকর্ত্রীর বিরুদ্ধে নির্যাতনের বর্ণনা দেয় আদুরি। ও জানায়, সারা দিন কাজ করিয়ে শুধু মুড়ি কিংবা কখনও ভাত শুধু লবণ মরিচ দিয়ে খেতে হতো। আর তার থাকার জায়গা মিলতো বাড়ির ব্যালকনিতে।

গৃহকর্ত্রী নওরীন নিজেও আদালতে আদুরিকে নির্যাতনের কথা স্বীকার করেছেন। এঘটনার প্রায় ৪ বছর পর ঢাকার ৩ নম্বর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক জয়শ্রী সমাদ্দার মঙ্গলবার এ মামলার রায় ঘোষণা করেন।  

আসামি নদীকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের পাশাপাশি এক লাখ টাকা জরিমানার আদেশ দিয়েছেন বিচারক। ওই অর্থ আদায়ের পর তা আদুরিকে দিতে হবে। আর জরিমানা দিতে ব্যর্থ হলে আরও এক বছরের কারাদণ্ড ভোগ করতে হবে।

এই রায়ে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন আদুরীর মা শাফিয়া। বিবিসি’র এক প্রতিবেদনের তথ্য মতে, হতদরিদ্র পরিবার থেকে ঢাকাসহ শহরের বাড়িতে কাজ করে বাংলাদেশে এমন গৃহকর্মী আছে প্রায় ২০লাখ। আইন ও সালিশ কেন্দ্রের হিসেবে ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে গত দশ বছরে এক হাজার ৭০টি গৃহকর্মী নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনায় ৫৬৫ জনের মৃত্যুও হয়েছে।

২০১৫ সালের ২১ ডিসেম্বর ‘গৃহকর্মী সুরক্ষা নীতিমালা-২০১৫’ অনুমোদন দিয়েছে সরকার। যেখানে বলা হয়েছে, প্রত্যেক গৃহকর্মীর কর্মঘণ্টা এমনভাবে বিন্যস্ত করতে হবে যাতে তিনি পর্যাপ্ত ঘুম, বিশ্রাম, চিত্তবিনোদন ও প্রয়োজনীয় ছুটির সুযোগ পান। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য, গৃহকর্মী সুরক্ষা নীতিমালায় ওই সুযোগ-সুবিধাসহ আরও যেসব সুযোগ-সুবিধার কথা বলা হয়েছে, তার অধিকাংশ পান না গৃহকর্মীরা।

সুযোগ-সুবিধার পরিবর্তে গৃহকর্মীদের ভাগ্যে জোটে অমানবিক নির্যাতন। অনেক গৃহকর্মী নির্যাতনের শিকার হয়েও কাজ করেন অভাবে কারণে। আইনের সঠিক প্রয়োগই কমাতে পারে গৃহকর্মী নির্যাতনের মাত্রা।

আসুন আমরা সবাই গৃহকর্মীদের সাথে পরিবারের সদস্যদের মতোই আচরণ করি। তাদেরও ভালোবাসি। গৃহকর্মী নির্যাতনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে সুন্দর সমাজ গড়ি। নিপাত যাক গৃহকর্মী নির্যাতন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com