অপরিহার্য শব্দ আর অপ্রতিরোধ্য সৃষ্টিশীলতার মিশেলে কবি আল মাহমুদ সৃষ্টি করেছেন এরকম হাজারও কবিতা।
নিজের সৃষ্টি দিয়ে হয়ে উঠেছেন গণমানুষের কবি। অসাধারণ কাব্যপ্রতিভা তাকে আসীন করেছে বাংলা সাহিত্যের প্রথম সারিতে।
কবি আল মাহমুদের জন্ম ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দের ১১ জুলাই ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার মোড়াইল গ্রামে।
সাধারণ মানুষের কাছে শুধু 'আল মাহমুদ' নামে পরিচিত হলেও তার পুরো নাম 'মীর আবদুস শুকুর আল মাহমুদ'। তার প্রধান পরিচয় 'কবি' হলেও তিনি একাধারে একজন ঔপন্যাসিক, প্রাবন্ধিক, শিশুসাহিত্যিক ও সাংবাদিক।
মূলত কিশোর জীবন থেকেই তার কাব্যপ্রতিভার প্রকাশ ঘটে। ১৯৫৪ সালে মাত্র ১৮ বছর বয়সে লেখালিখির সূত্রে ঢাকায় আসেন তিনি। সেসময় এপার ও ওপার বাংলার বিভিন্ন পত্রিকায় তার লেখা প্রকাশিত হয় যা পাঠকসমাজে আলোচনার সৃষ্টি করে। পরবর্তীতে বিভিন্ন পত্রিকায় কাজের সুবাদে তিনি সাধারণ মানুষের কাছে বেশ পরিচিত হয়ে উঠেন।
আল মাহমুদের কবিতার বৈশিষ্ট্য কিছুটা ভিন্ন প্রকৃতির। আধুনিক বাংলা কবিতার ভাণ্ডারকে তিনি সমৃদ্ধ করেছেন গ্রামীণ জীবন দিয়ে।
লোকজ শব্দের অনন্য প্রয়োগে তার কবিতা হয়ে উঠেছে ব্যতিক্রমী। এছাড়া বিচিত্র বিষয়ের মেলবন্ধন তার কবিতার অন্যতম দিক।
তার প্রথম কাব্যগ্রন্থ 'লোক লোকান্তর' প্রকাশিত হয় ১৯৬৩ সালে। প্রথম গ্রন্থই তাকে জনপ্রিয় কবিদের সারিতে জায়গা করে দেয়। এরপর কালের কলস, সোনালী কাবিন, মায়াবী পর্দা দুলে উঠো, আরব্য রজনীর রাজহাঁস, বখতিয়ারের ঘোড়া ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ।
শুধু কবিতা লিখেই ক্ষান্ত হননি তিনি। লিখেছেন পানকৌড়ির রক্ত, সৌরভের কাছে পরাজিত, গন্ধবণিকসহ অজস্র গল্প। কবির আত্মবিশ্বাস, নারী নিগ্রহ, সময়ের সাক্ষী তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধের বই। আলোচিত উপন্যাস কাবিলের বোন, উপমহাদেশ, যমুনাবতীসহ লিখেছেন পঁচিশটিরও বেশী উপন্যাস।
পেশাগত জীবনে কবি দীর্ঘকাল সাংবাদিকতার সাথে জড়িত থাকলেও পরবর্তীতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমীতে যোগদান করেন এবং ১৯৯৩ সালে পরিচালকের পদ থেকে অবসর গ্রহণ করেন।
নিজ সৃষ্টিশীলতার মাধ্যমে আল মাহমুদ অর্জন করেছেন একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার, ফিলিপস সাহিত্য পুরস্কার, নাসিরউদ্দিন স্বর্ণপদকসহ অসংখ্য পুরস্কার।
বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান এই কবির ৮১ তম জন্মদিনে তার প্রতি রইল অজস্র শ্রদ্ধা।