১৯০৮ সালে ফেনী জেলাযর গুথুমা গ্রামে জন্ম নেন তিনি। তার বাবা মুহাম্মদ নুরুল্লাহ চৌধুরী ছিলেন মুন্সেফ। আর মা আছিয়া খাতুন চৌধুরী, গৃহিনী।
শৈশবেই পিতৃহীন হওয়ায় নানার বাড়িতে মা ও ভাই হবীবুল্লাহ বাহারের সাথে বেড়ে ওঠেন।
শামসুন নাহারের স্কুলে যাবার বয়সে দেশে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার ব্যাপারটি সহজ ছিল না। তাকে ভর্তি করা হয় চট্টগ্রাম ডক্টর খাস্তগীর গার্লস হাই স্কুলে। কিন্তু ষষ্ঠ শ্রেণি পর্যন্ত পড়ার পর বাধা এলো স্কুলে যাওয়ার ক্ষেত্রে। ঘরে বসেই চলল পড়ালেখা এবং প্রাইভেটে ম্যাট্রিক পরীক্ষা দিয়ে পাস করেন তিনি।
১৯২৬ সালে শামসুন নাহারের বিয়ে হয় ওয়াহিদ উদ্দিন মাহমুদের সঙ্গে। তিনি স্ত্রীর উচ্চশিক্ষার ব্যাপারে যেমন সহযোগিতা করেছেন, তেমনি জীবনভোর সব কাজে সমর্থন দিয়েছেন।
১৯২৮ সালে আইএ পাস করেন। ততদিনে তিনি মা হয়েছেন। আর তাই কিছুদিনের জন্য পড়াশুনায় ছেদ পড়ে। কিন্তু সংসার দেখার পাশাপাশি পড়ার চর্চা জারি রাখেন। সেই সময় লেখালেখিও শুরু হয় তার।
১৯৩২ সালে তিনি বিএ পাস করেন। তারপর দশ বছরের ছেদ। ১৯৪২ সালে এমএ পাস করেন।
বেগম রোকেয়ার সঙ্গে শামসুন নাহারের পরিচয় হয় লেখালেখির সুবাদে। রোকেয়ার মৃত্যুর পর কলকাতার অ্যালবার্ট হলের শোকসভায় তার স্মরণে শামসুন নাহার বক্তৃতা দেন।
১৯৫৫ সালে পাকিস্তান সরকার বিবাহ ও পারিবারিক আইন সংশোধনের জন্য একটি কমিশন গঠন করে। নারী সমাজের নির্যাতনের প্রধান কারণ, বহুবিবাহ ও বিনা কারণে স্ত্রী পরিত্যাগের বিরুদ্ধে শামসুন নাহারের অক্লান্ত চেষ্টায় বিবাহ ও পারিবারিক আইন পাস হয়।
১৯৬১ সালে এই নারীর প্রচেষ্টায় তৈরি হয় পঙ্গুশিশু পুনর্বাসনকেন্দ্র। আর ১৯৬৩ সালে তিনি পাকিস্তান শিশুকল্যাণ পরিষদের সভাপতি নির্বাচিত হন। একই বছর ন্যাশনাল কাউন্সিল অব সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার অধিবেশনে যোগ দিতে রাওয়াল পিন্ডি যান।
১৯৬২ সালে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন শামসুন নাহার।
১৯৬৪ সালের ৯ মার্চ তিনি এক সভা আহ্বান করেন বাংলা একাডেমীতে। সেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীনিবাসের নাম পরিবর্তন করে রোকেয়া হল রাখার প্রস্তাব বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে জানান। প্রস্তাবটি কার্যকর করা হয়।
কলকাতায় পড়ার সময় শামসুন নাহার কবি কাজী নজরুল ইসলামের লেখায় অনুপ্রাণিত হয়ে লিখতে শুরু করেন। তার প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্যে রয়েছে ‘পুণ্যময়ী’, ‘ফুল বাগিচা’, ‘বেগম মহল’, ‘রোকেয়া জীবনী’, ‘শিশুর শিক্ষা’, ‘আমার দেখা তুরস্ক’ ও ‘নজরুলকে যেমন দেখেছি’।
১৯৬৪ সালের ১০ এপ্রিল শামসুন নাহার মারা যান।
সমাজসেবার জন্য ১৯৮১ সালে তাকে স্বাধীনতা দিবস পুরস্কার এবং ১৯৯৬ সালে বেগম রোকেয়া পদক প্রদান করা হয়।
শামসুন নাহারের স্মৃতি অমর করে রাখতে ঢাকা ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি ছাত্রীনিবাসের নাম, শামসুন নাহার হল রাখা হয়।
২০১৭ সালের ১০ এপ্রিল তার ৫৩তম মৃত্যুবারর্ষিকী।