বাংলার গর্ব এফ আর খান

বাংলার গর্ব এফ আর খান

'পুরকৌশলের আইনস্টাইন’ নামে পরিচিত এফ আর খান। পুরো নাম ফজলুর রহমান খান। তার হাত ধরেই স্থাপত্য শিল্পে হয়েছে নতুন যুগের সূচনা।

ফজলুর রহমান খান ১৯২৯ সালের ৩এপ্রিল ঢাকাতে জন্ম নেন। তার বাবা ছিলেন একজন গণিত শিক্ষক। বাবার উৎসাহেই তিনি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে পড়াশোনা করেন। তখনকার আহসানউল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের (বর্তমানের বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়) ছাত্র ছিলেন তিনি। 
 

বৃত্তি পেয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য ১৯৫২ সালে যুক্তরাষ্ট্রে যান। তখন তার বয়স ২৩ বছর। শিকাগোর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিভার্সিটি অব ইলিনিয়ে পড়শোনা করেন তিনি।

বর্তমানে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জায়গায় রয়েছে আকাশচুম্বী সব ভবন। এরকম ভবন নির্মাণের পথিকৃৎ হলেন এফ আর খান।   

শিকাগোতে ‘স্কিডমোর, ওয়িংস এন্ড মেরিল’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করতেন। তার আবিষ্কৃত ‘টিউব’ পদ্ধতি তাকে বিশ্ববিখ্যাত করে তোলে। এ পদ্ধতিতে উঁচু ভবন তৈরি করলে দুর্ঘটনার ঝুঁকি কম থাকে। আজও পৃথিবীর উঁচু উঁচু ভবন নির্মাণে তার দেখানো পথ অনুসরণ করা হয়।
 
১৯৭৩ সালে নির্মাণ কাজ শেষ হওয়া শতাধিক তলার সিয়ার্স টাওয়ারের (বর্তমানে উইলিস টাওয়ার) নকশা তিনি ও আরেক স্থপতি গ্রাহাম ব্রুস তৈরি করেছিলেন। টেলিগ্রাফের দেওয়া তথ্য অনুয়ায়ী এটি একটি ১০৮ তলা ভবন এবং ২৪ বছর এটি পৃথিবীর সবচেয়ে উঁচু ভবন ছিল। শিকাগোর জন হ্যানকক সেন্টারের নকশাও ছিল তার।

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ফজলুর রহমানের বয়স ছিল ৪২ বছর। তখন যুক্তরাষ্ট্রে ছিলেন তিনি। সশস্ত্র যুদ্ধে অংশ নিতে না পারলেও মুক্তিযুদ্ধে অবদান ছিল তার। মুক্তিযুদ্ধের পক্ষে সমর্থন আদায়ে প্রচারণা চালান তিনি। পাশাপাশি সহায়তা ও তহবিল সংগ্রহেও কাজ করেন। এ জন্য তিনি শিকাগোতে বাংলাদেশ ইমার্জেন্সি ওয়েলফেয়ার আপিল ও বাংলাদেশ ডিফেন্স লিগ নামের দুইটি সংগঠন প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।

ইঞ্জিনিয়ারিং নিউজ রেকর্ডসে পাঁচবার স্থাপত্য শিল্পে সবচেয়ে বেশি অবদান রাখা ব্যক্তিদের মধ্যে তার নাম উল্লেখ করা হয়। ১৯৭৩ সালে তিনি নির্বাচিত হন ইঞ্জিনিয়ার নিউজ রেকর্ডস-কন্সট্রাকশন’স ম্যান অব দ্যা ইয়ার।

১৯৯৮ সালে তার নামানুসারে শিকাগোর জ্যাকসন স্ট্রিট ও ফ্র্যাঙ্কলিন স্ট্রিটের সংযোগস্থলের নাম রাখা হয় ‘ফজলুর আর. ওয়ে’। আর মরণোত্তর স্বাধীনতা পুরস্কার দেওয়া হয় ১৯৯৯ সালে।

সোমবার তার ৮৮ তম জন্মদিন। জন্মদিনে তার স্মরণে সার্চ ইঞ্জিন গুগল একটি ডুডল প্রকাশ করে।

১৯৮২ সালের ২৭ মার্চ, সৌদি আরবে তিনি মারা যান। পরবর্তীতে তাকে শিকাগোতে সমাহিত করা হয়।  

Related Stories

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com