‘বাঁশ বাগানের মাথার ওপর চাঁদ উঠেছে ওই
মাগো আমার শোলক বলা কাজলা দিদি কই?’
কবিতাটিতে যখন ভাই তার দিদিকে খুঁজে পেত না, পড়তে পড়তে চোখের কোল ভিজে উঠত। ১ ফেব্রুয়ারি এই কবির ৬৯তম মৃত্যুদিন।
১৮৭৮ সালের ২৭ নভেম্বর পশ্চিবঙ্গের নদীয়া জেলার জমশেরপুরে জন্ম হয় তার। কলকাতার ডাফ কলেজ (বর্তমান স্কটিশ চার্চ কলেজ ) থেকে বিএ পাস করেন।
বিচারপতি সারদাচরণ মিত্রের সচিব হিসেবে তিনি কাজ শুরু করেন। পরে নাটোরের মহারাজার সচিব, কলকাতা কর্পোরেশনের লাইসেন্স-ইন্সপেক্টর, এফ এন গুপ্ত কোম্পানির ম্যানেজার প্রভৃতি পদে চাকরি করেন।
যতীন্দ্রমোহন ছিলেন রবীন্দ্রোত্তর যুগের শক্তিমান কবিদের একজন। পল্লীর সৌন্দর্য ও সুখ-দুঃখের কথা প্রকাশ করেছেন মুন্সিয়ানার সঙ্গে। ভাগ্যবিড়ম্বিত ও নিপীড়িত নারীদের কথা তিনি দরদের সঙ্গে প্রকাশ করেছেন। ‘কাজলাদিদি’ ও ‘অন্ধবন্ধন’ এ ধরনের তার দুটি বিখ্যাত কবিতা। পাঠ্যপুস্তকেও রয়েছে তার এই কবিতা দুটি।
তার উল্লেখযোগ্য কাব্যগ্রন্থ, রেখা, অপরাজিতা, বন্ধুর দান, জাগরণী, কাব্যমালঞ্চ ইত্যাদি।
গ্রামীণ জীবনের সাধারণ বিষয়, সুখ-দুঃখকে সহজ ভাষায় প্রকাশ করেছেন তিনি। ‘অন্ধবধু’ কবিতাটিতে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, অন্য ইন্দ্রিয়সচেতনতা দিয়ে দৃষ্টিহীনদের নিজেকে অসহায় ভাববার প্রতিবন্ধকতা দূর করা সম্ভব। আর তা বোঝাতে তিনি ব্যবহার করেছেন পল্লীর খুব চেনা উপাদান। যেমন, ঝরা বকুল, জ্যৈষ্ঠের আম, কোকিলের ডাক ইত্যাদি। তার ‘অন্ধবন্ধন’ কবিতায় এই প্রকাশ মেলে-
‘জ্যৈষ্ঠ আসতে কদিন দেরি ভাই,
আমের গায়ে বরণ দেখা যায়?
অনেক দেরি? কেমন করে হবে!
কোকিল-ডাকা শুনেছি সেই কবে।'