কিউবা বিপ্লব ও ফিদেল কাস্ত্রো

নভেম্বর মাসে ‘কমাদান্তে’ ফিদেল কাস্ত্রো বিদায় নিয়েছেন পৃথিবীর মঞ্চ থেকে। তখন থেকেই তাকে নিয়ে আমার লেখার ইচ্ছে জেগেছে। কারণ তিনি ছিলেন কিউবান বিপ্লবের অবিসংবাদিত নেতা। তার মৃত্যুতে কেবল কিউবা নয়, কেঁদেছে সাম্যবাদের স্বপ্ন দেখা সব মানুষ।

এই মানুষটি কমিউনিস্ট ও পুঁজিবাদী শিবিরে ভাগ হওয়া গত শতকের বিশ্বে ঠাণ্ডা লড়াইয়ের এক প্রতীকে পরিণত হয়েছিলেন।বিশ্ব পুঁজিবাদের হোতা, যুক্তরাষ্ট্রের নাকের ডগায় গড়ে তুলেছিলেন একটি কমিউনিস্ট রাষ্ট্র। তাকে ক্ষমতা থেকে সরানোর যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় পঞ্চাশ বছরের চেষ্টা বারবার ব্যর্থ করেছেন।  

কিউবা বিপ্লবের অপর কিংবদন্তী আর্নেস্ত্রো চে গেভারার 'কিউবা বিপ্লব' নামের বইটি থেকে আমরা জানতে পারি এই বিপ্লবীসহ তার সহযোদ্ধাদের কথা।

কিউবা বিপ্লবের জন্য যারা নিজেদের জীবন বাজী রেখে যুদ্ধ করছিলেন তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো, চে গেভারা, সিয়েররা মায়েস্ত্রার, রাউল কাস্ত্রো, হুয়ান আইমেইদা এবং রামিরো ভালদেস। 

১৯৫৩ সালে সান্তিয়াগো দ্য ক্যুবার মনকাদা সেনাছাউনি আক্রমণের মধ্য দিয়েই বিপ্লব শুরু করেছিলেন ফিদেল কাস্ত্রো। বিপ্লবের ধাক্কায় ১৯৫৯ সালে পতন ঘটে কিউবার যুক্তরাষ্ট্র সমর্থিত একনায়ক ফ্লুজেনসিও বাতিস্তার, ১ জানুয়ারি বাতিস্তা দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান।

বিপ্লবের সময় তারা তেমন অস্ত্র জোগাড় করতে না পারলেও তাদের মনোবল ছিল  প্রচুর। চে গেভারা  ছেলেন গেরিলা বাহিনীর ডাক্তার আর ফিদেল কাস্ত্রো ছিলেন গেরিলা বাহিনীর প্রধান। তাদের আরও অনেক সহযোগী গেরিলা ছিলেন। কয়েক দল কৃষক এই গেরিলা বাহিনীতে অংশ নেন। তাদের মধ্যে একজন কবিও ছিলেন নাম এল পাতাহো। আবার এই  বাহিনীতেই ছিল একজন বিশ্বাস ঘাতক, যে এক জাহাজ অস্ত্র গোপনে বিক্রি করে দিয়েছিল। 

১৯৫৬ সালের ৫ ডিসেম্বর বাতিস্তার বাহিনী তাদের একটা টক্কর দিয়েছিল। সানচেস মস্কেরার বাহিনীকে হারানোর পর তারা বিমান হামলার মুখে পড়েন। এরপর থেকে তারা রাতে চলাচল করতেন যেন শত্রু সরাসরি আক্রমণ করার সুযোগ না পায়।গেরিলা আক্রমণের জন্য কৃষকরা গাড়ি চলার পথ তৈরি করে দেয়। এরপর থেকে তারা শত্রুর ঘাঁটি আক্রমণ করত এবং সফলতার সাথে শত্রুকে পরাজিত করে তাদের অস্ত্রগুলো নেওয়া শুরু করেন। এরমাঝেই দল বড় হতে থাকে এবং যুদ্ধে জয় লাভ করতে থাকে। এসময় একজন সাংবাদিক ফিদেল কাস্ত্রোর সাক্ষাতকার প্রকাশ করলে বিশ্ব কিউবা বিপ্লবীদের কথা জানতে থাকেন এবং দলেও আরও নতুন নতুন সৈন্য যোগ দেয়। 

মানুষের লড়াইয়ের ইতিহাসে কিউবান বিপ্লবের নাম স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। বিপ্লবীদের ত্যাগ, লড়াই, অভিযানের ভয়াবহতা, সর্বোপরি বিপ্লবের প্রতি দায়বদ্ধতার কারণে। কিউবা বিপ্লবের অনেক ঘটনা আজ মানুষ জানতে পারত না যদি না চে গেভারা এই বইটি লিখে না যেতেন।

একাত্তরে মুক্তিকামী বাঙালিদের পক্ষে দাঁড়ানো ফিদেল কাস্ত্রোকে বাংলাদেশ সরকার ২০১৩ সালে ‘মুক্তিযুদ্ধ মৈত্রী সম্মাননায়’ ভূষিত করে।

বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ছিল কমিউনিস্ট নেতা ফিদেল কাস্ত্রোর।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com