১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেটের করিমগঞ্জে জন্ম নেন মুজতবা। পৈতৃক বাড়ি হবিগঞ্জ। বাবা সরকারি চাকুরে হওয়াতে শৈশব কেটেছে নানান জায়গায়। তাই পড়ালেখাও করেছেন অনেকগুলো স্কুলে।
Published : 15 Sep 2016, 10:00 PM
বাংলা সাহিত্যে সৈয়দ মুজতবা আলীর ব্যঙ্গাত্মক রচনা ও ভ্রমণ কাহিনী তাকে বিখ্যাত করে। লেখায় তার সূক্ষ ও পরিমিত রসবোধ ঈর্ষণীয়।
বিচিত্র জীবন প্রবাহের নানা অনুসঙ্গ কৌতুক ও ব্যঙ্গ আকারে প্রকাশ পেয়েছে তার লেখায়। গল্পে, প্রবন্ধে বর্ণনার ভঙ্গি অসাধারণ। প্রবন্ধকে রম্য রচনার ঢঙে লেখার জন্যই তিনি অনন্য।
তার সর্বশ্রেষ্ঠ কীর্তি হিসেবে উল্লেখ করা করা যায় ‘দেশে বিদেশে’-র কথা। এমন বাঙালি পাঠক হয়তো খুঁজে পাওয়া যাবে না যার কাছে ‘আব্দুর রহমান’ চরিত্রের বর্ণনাভঙ্গি অসাধারণ লাগেনি। তাছাড়া এই রচনায় তিনি খুব সরল ভাষায় যেরকম আকর্ষণীয়ভাবে আফগানিস্তানের মানুষের জীবন যাপনের বর্ণনা তুলে ধরেছেন তা বাংলা সাহিত্যে বিরল।
সৈয়দ মুজতবা আলী বিভিন্ন দেশে ঘুরেছেন, অনেকদিন প্রবাস-জীবন কাটিয়েছেন। এর ফলে অনেক বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয়েছে তার। নানারকম মানুষের সাথে মিশেছেন, জেনেছেন তাদের সম্পর্কে। এর প্রভাব পড়েছে তার রচনায়।
শুধুমাত্র সাহিত্য রচনায়ই নয়, ব্যক্তিজীবন, সংসারজীবনেও এরূপ রসবোধেই পূর্ণ ছিল।
মুজতবা তার এক ছেলের নাম রাখলেন ‘ভজুরাম’। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে বললেন, ‘সন্তানের নাম রাখা এক বিশাল ঝামেলার ব্যাপার। নেপালে দারোয়ানকে বলে ভজুরাম। তাই গিন্নিকে এই নাম বললাম যাতে কখনও আমাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস না করেন।’
মুজতবা আলী শুধু একজন সাহিত্যিকই নন, ভাষার ওপরেও ছিল অসাধারণ পাণ্ডিত্য। তিনি মোট ১৮টি ভাষা জানতেন। ভাষাগুলো জানতেন মানে শুধু বলতেই পারতেন না, সেসব ভাষা ভালোভাবে পড়তে ও লিখতে পারতেন। তবে ভাষা শিখে নিজেকে জাহির করতেন না তিনি। বরং ভাষাগুলোর সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতেন।
জার্মানির একটি ঘটনা থেকে ভাষার ওপর তার পাণ্ডিত্য সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। সেই সময় জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি করছেন মুজতবা আলী। বিশ্ববিদ্যালয়ে তখন এক কৌতুক প্রতিযোগিতা হয় জার্মানির আঞ্চলিক ভাষায়। প্রতিযোগিতায় মুজতবা আলী জিতে নেন দ্বিতীয় পুরস্কার! তুলনামূলক ধর্মতত্ত্বেও তার পাণ্ডিত্য ছিল উল্লেখযোগ্য। সম্পূর্ণ গীতা মুখস্থ ছিল তার!
১৯০৪ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর সিলেটের করিমগঞ্জে জন্ম নেন মুজতবা। পৈতৃক বাড়ি হবিগঞ্জ। বাবা সরকারি চাকুরে হওয়াতে শৈশব কেটেছে নানান জায়গায়। তাই পড়ালেখাও করেছেন অনেকগুলো স্কুলে।
১৯১৯ সালে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সিলেটে আসেন। সে সময় তার সাথে মুজতবা আলীর যোগাযোগ হয়। ভাষা সাহিত্যের প্রতি আগ্রহ দেখে তিনি মুজতবা আলীকে নিয়ে যান শান্তিনিকেতনে। ১৯২৬ সালে বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন তিনি। উচ্চশিক্ষার জন্য এরপর আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় এবং পরবর্তীতে জার্মানির বন বিশ্ববিদ্যালয়ে যান। মিশরের আলা আজহার বিশ্ববিদ্যালয়েও পড়ালেখা করেন।
পেশাজীবনে তিনি শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা, সরকারি চাকরি এবং কিছুদিন রেডিওতেও চাকরি করেন। ভ্রমণ কাহিনী দেশে বিদেশে, উপন্যাস শবনম, ছোটো গল্প চাচা কাহিনী, টুনি মেম, রম্য রচনা পঞ্চতন্ত্র আর রসগোল্লা গল্পটি আমার খুব প্রিয়। তার রচিত বইয়ের সংখ্যা ৩০।
১৯৭৪ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি এই অসামান্য প্রতিভাধর ব্যক্তিত্ব মৃত্যুবরণ করেন।
সাহিত্যে অবদানের জন্যও বাংলাদেশ সরকার ২০০৫ সালে তাকে মরণোত্তর একুশে পদক দেয়।
আর্কাইভ থেকে।