সায়মন ড্রিং লিখেছিলেন, “আল্লাহর নামে আর অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষার অজুহাতে ঢাকা আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত এক সন্ত্রস্ত নগর।”
Published : 11 Jan 2025, 07:26 PM
সায়মন ড্রিং নামটির সঙ্গে আমরা কমবেশি সবাই পরিচিত। ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি বাহিনীর হত্যাযজ্ঞের খবর যিনি সবার আগে পৌঁছে দিয়েছিলেন বিশ্বের কাছে।
কীভাবে এই ব্রিটিশ সাংবাদিক আমাদের বন্ধু হয়ে উঠলেন? এই প্রশ্নের উত্তর জানতে হলে আমাদেরকে স্বাধীনতাযুদ্ধের শুরুর দিকে তাকাতে হবে।
বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী গণহত্যা শুরুর আগে ঢাকায় অবস্থানরত প্রায় অর্ধশত বিদেশি সাংবাদিককে আটকে ফেলে তখনকার হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে। এরপর তাদেরকে ঢাকা ছাড়তে বাধ্য করা হয়, যাতে গণহত্যার কোনো খবর সংগ্রহ করতে না পারে বিশ্ব গণমাধ্যম।
তবে সায়মন ড্রিং বুঝতে পারেন, এদেশের জনগণের বিরুদ্ধে পাক বাহিনী গোপন কোনো ষড়যন্ত্র করছে। তাই তিনি নির্দেশ অমান্য করে প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে লুকিয়ে পড়েন। শ্বাসরুদ্ধকর ৩২ ঘণ্টা সময় কাটে হোটেলের লবি, ছাদ, বার, কিচেনের মতো জায়গায়।
সায়মন ড্রিংয়ের অনুমান ভুল ছিল না। ২৫ মার্চ রাতে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ব্যাপক গণহত্যা চালায় পাক বাহিনী। ২৭ মার্চ কারফিউ উঠে গেলে তিনি সামরিক বাহিনীর চোখ এড়িয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হল, রাজারবাগ পুলিশ লাইনস, পুরান ঢাকার বিভিন্ন এলাকাসহ ধানমণ্ডি ৩২ নম্বরে বঙ্গবন্ধুর বাড়ি ঘুরে দেখেন ও তথ্য সংগ্রহ করেন। পরে অক্ষত অবস্থায় সবগুলো নোটবুক সঙ্গে নিয়ে থাইল্যান্ডে চলে যান।
সেখানে পৌঁছে তিনি সংগ্রহ করা তথ্য ও ছবি পাঠিয়ে দেন লন্ডনের বিখ্যাত পত্রিকা দ্য ডেইলি টেলিগ্রাফে। এরপর ৩০ মার্চ প্রকাশিত হয় সায়মন ড্রিংয়ের প্রতিবেদন ‘ট্যাংকস ক্রাশ রিভল্ট ইন পাকিস্তান’। সেটাই ছিল আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে ইংরেজি ভাষায় পাকিস্তানি গণহত্যার প্রথম বিবরণ।
সায়মন ড্রিং লিখেছিলেন, “আল্লাহর নামে আর অখণ্ড পাকিস্তান রক্ষার অজুহাতে ঢাকা আজ ধ্বংসপ্রাপ্ত এক সন্ত্রস্ত নগর।”
ব্রিটিশ এই সাংবাদিকের জন্ম ১৯৪৫ সালের ১১ জানুয়ারি। তিনি ১৮ বছর বয়স থেকে সাংবাদিকতা শুরু করেন। দেখেছেন ২২টি যুদ্ধ, অভ্যুত্থান ও বিপ্লব। যুদ্ধক্ষেত্রের সংবাদ সংগ্রহ করতে গিয়ে তিনি একাধিকবার আহতও হয়েছেন।
একাত্তরে বাংলাদেশের মানুষের পাশে দাঁড়ানো এই সাংবাদিককে ২০১২ সালে স্বাধীনতাযুদ্ধের বন্ধু হিসেবে সম্মাননা দেয় সরকার।
বাংলাদেশের বন্ধু সায়মন ড্রিং ২০২১ সালে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৩। জেলা: বাগেরহাট।