ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৭ সালে একুশে পদক পান সুকুমার বড়ুয়া।
Published : 05 Jan 2025, 04:44 PM
সহজ-সরল ভাষার লেখনি আর ছড়ার ছন্দে শিশুদের মন জয় করেছেন সুকুমার বড়ুয়া। তিনি যেমন সামাজিক সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন তেমনি তার লেখায় আছে হাস্যরসের খোরাক।
এই ছড়াকার ১৯৩৮ সালের ৫ জানুয়ারি চট্টগ্রামের রাউজানে জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবা সর্বানন্দ বড়ুয়া এবং মা কিরণ বালা বড়ুয়া।
শৈশবে বাবা-মাকে হারিয়ে অনাথ হয়ে পড়েন তিনি। কিছুদিন মামা বাড়ি ও কিছুদিন দিদির বাড়িতে থেকে তিনি দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত পড়তে পেরেছিলেন। এরপর তার পড়ালেখা বন্ধ হয়ে যায়।
দারিদ্র্যের কষাঘাতে সুকুমার বড়ুয়া একসময় শিশু গৃহকর্মী হিসেবে কাজ শুরু করেন। জীবিকার তাগিদে ফলমূল, আইসক্রিমও ফেরি করে বিক্রি করতে হয়েছে তাকে।
জীবনের নানা প্রতিকূলতা পেরিয়ে ১৯৬২ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী হিসেবে যোগ দেন সুকুমার বড়ুয়া। পরে পদোন্নতি পেয়ে তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী হন এবং ১৯৯৯ সালে স্টোর কিপার হিসেবে অবসর গ্রহণ করেন।
লেখালেখির প্রতি তার আগ্রহ ছিল ছোটবেলা থেকেই। একসময় পত্রিকায় প্রকাশ হতে থাকে তার লেখা। প্রথম ছড়া ‘বৃষ্টি নেমে আয়’ প্রকাশিত হয় খেলাঘরের পাতায়।
২০১৬ সালে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নিজের শৈশব সম্পর্কে তিনি বলেন, “অভাব ছিল। অনাথ ছিলাম তো! বাড়ি বাড়ি কাজকর্ম করেই সময় কাটতো। লেখা ছাপা হয়েছে তখনও এক বাসায় কাজ করতাম। যাদের রান্না করতাম, তাদের পাতে ভাত বেড়ে দিয়েই পত্রিকা আনতে ছুটলাম। তারপর এনে তাদের দেখাতাম। তারা বলতেন, ‘তুই না রান্না করিস? কখন লেখক হয়ে গেলি?’ তাজ্জব হয়ে যেত তারা।”
সুকুমার বড়ুয়ার উল্লেখযোগ্য বইগুলো হল- ঠুসঠাস, পাগলা ঘোড়া, নদীর খেলা, চন্দনা রঞ্জনার ছড়া, ভিজে বেড়াল ইত্যাদি। ব্যঙ্গাত্মক, কৌতূহলোদ্দীপক ও নৈতিক শিক্ষামূলক রচনার পাশাপাশি রাজনৈতিক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমৃদ্ধ তার রচনাবলী।
ভাষা ও সাহিত্যে বিশেষ অবদানের জন্য ২০১৭ সালে একুশে পদক পান সুকুমার বড়ুয়া। এছাড়াও বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার, বাংলাদেশ শিশু একাডেমী পুরস্কারসহ নানা পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন তিনি।
বয়সের ভারে ন্যুজ সুকুমার বড়ুয়া রাজধানীতে স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে থাকছিলেন। ২০২২ সালে তিনি গ্রামের বাড়িতে ফিরে যান। সেখানে তার বাড়ি ‘শুভালয়’- এ বর্তমানে থাকছেন।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।