
কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার ধরণীবাড়ি ইউনিয়নে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রাজবাড়ির মতো এক প্রাসাদ। স্থানীয়ভাবে এই বাড়িটি মুন্সিবাড়ি নামে পরিচিত।
সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে নিশ্চিহ্ন হতে বসেছে ৪০০ বছরের ঐতিহ্য ও মহাকালের এই স্বাক্ষী।
কথিত আছে, উলিপুরের কাশিম বাজার এস্টেটের সপ্তম জমিদার শ্রী কৃষ্ণনাথ নন্দী একটি মামলায় আদালতের কাঠগড়ায় দাঁড়ানোর বিষয়কে নিজের জন্য অবমাননাকর ও আত্মমর্যাহীন মনে করে আত্মহত্যা করেন।
তিনি মারা যাওয়ার পর তার স্ত্রী মহারাণী স্বণর্ময়ী দেবী পরবর্তীতে কাশিমবাজার এস্টেটের জমিদার হন। তার অধীনে সেসময় কাজ করতেন বিনোদী লাল নামের একজন ব্যক্তি। তিনি ছিলেন মুনসেফ (মুন্সি)।
বিনোদী লাল সেসময় বার্ষিক একশ টাকায় ধরণীবাড়ি এস্টেটের জোতদারি ভোগ করতেন। বিনোদী লাল মুন্সি একদিন পশু শিকার করতে বের হন হাতির পিঠে চড়ে। এক স্থানে তিনি দেখতে পান ব্যাঙ একটি সাপ ধরে খাচ্ছে।
তখনকার সময় প্রচলিত ছিল, ব্যাঙ যে স্থানে সাপকে ধরে খায় সেই স্থানে বাড়ি করলে অনেক ধন-সম্পত্তির মালিক হওয়া যায়। বিনোদী লাল তা ভেবে সেখানে বাড়ি করার মনস্থির করেন। ফিরে গিয়ে তিনি মহারাণী স্বণর্ময়ীর কাছ থেকে অনুমতি নিয়ে একটি বাড়ি নির্মাণ করেন ধরণীবাড়িতে।
এরপর বিনোদী লালের মৃত্যূ হলে সেখানে বসবাস করতে শুরু করেন তার পালিত পুত্র ব্রজেন্দ্রলাল মুন্সি। তার টিটু ও বুদি নামের দুই কন্যা সন্তান ছিল। বুদি ছোট বেলায় মারা যায়। বড় কন্যা টিটুকে কলকাতায় বিয়ে দেন তিনি। বড় মেয়ের বিয়ের সময় আঠারো শতকে এই বাড়িটি নির্মাণ করেন।
যত্নের অভাবে বাড়িটির অনেক জিনিসপত্র চুরি হয়ে গেছে, বাড়িটির অনেক জায়গাও দখল হয়ে গেছে।
৩০ একর জায়গার উপর ১৮ একর জুড়ে নির্মিত হয় এই মুন্সিবাড়ি। বাড়িটির মূল ফটকের পাশে রয়েছে পুরনো কাঁঠালি চাঁপা ফুলের গাছ, তার পাশে বাড়িটির মূল ভবন, ভবনটির পিছনে রয়েছে শিব মন্দির, মন্দিরের পাশে উন্মোক্ত দোল মঞ্চ, তুলসি বেদি, নাট মন্দির, দুর্গা মন্দির আর মন্দিরের উত্তর-পশ্চিমে আছে স্নানাগার। এর ভিতরে আছে একটি কূপ। বিশাল বাড়িটির সামনে রয়েছে শান বাঁধানো পুকুর।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: কুড়িগ্রাম।