আগে গ্রামে বসন্ত বরণ উপলক্ষে পালাগান, যাত্রাপালা ও মেলা হতো।
Published : 14 Feb 2025, 09:25 AM
বসন্ত বাতাসে সই গো, বন্ধুর বাড়ির ফুলের গন্ধ আমার বাড়ি আসে— বাউল সম্রাট শাহ আব্দুল করিমের এই গানের সুরে সুর মিলিয়ে আবারও এসেছে বসন্ত। ফুলের ঘ্রাণ, দখিনা বাতাস আর ভালোবাসার পরশ নিয়ে ঋতুরাজ হাজির বাংলার দুয়ারে।
‘ঋতুরাজ’ নামে পরিচিত বসন্ত ষড়ঋতুর সবশেষ ঋতু। যা বাংলা পঞ্জিকায় ফাল্গুন ও চৈত্র মাসজুড়ে স্থায়ী হয়।
বসন্তকালে প্রকৃতি যেন নতুন করে প্রাণ ফিরে পায়। শীতের শুষ্কতা কাটিয়ে গাছে গাছে নতুন পাতা গজায়, ফুলে ফুলে ভরে ওঠে চারদিক। ফাগুনের ঝিরিঝিরি দখিনা বাতাস যেন মনে দোলা দিয়ে যায়। বাতাসে ভেসে বেড়ায় কোকিলের ডাক।
পয়লা ফাল্গুনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় বসন্ত বরণের আয়োজন করে থাকে জাতীয় বসন্ত উৎসব উদযাপন পরিষদ। এছাড়াও শিল্পকলা একাডেমি, ছায়ানটসহ বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন বসন্ত বরণ উপলক্ষে নানা উদ্যোগ গ্রহণ করে।
দেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতেও বসন্তের আগমনকে জমকালোভাবে উদযাপন করা হয়। বাসন্তী সাজে ক্যাম্পাসে আসে শিক্ষার্থীরা, অনুষ্ঠিত হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
শহরের ব্যস্ততার বাইরে গ্রামে বসন্ত যেন আরও বেশি প্রাণবন্ত। শীত শেষে মাঠজুড়ে সরিষা ফুলের হলুদ আভা, আম-কাঁঠালের গাছে কচি সবুজ পাতা, আর কোকিলের ডাক মিলে তৈরি হয় উৎসবের আমেজ। প্রকৃতি যেন আপন মনে নিজেকে সাজিয়ে তোলে।
আগে গ্রামে বসন্ত বরণ উপলক্ষে পালাগান, যাত্রাপালা ও মেলা হতো। সময়ের পরিবর্তনে এসব আয়োজন কমে গেলেও, এখনো কিছু এলাকায় বসন্তবরণের আয়োজন চোখে পড়ে।
বাংলার সাহিত্য, গান ও সংস্কৃতিতে নজর দিলে খুঁজে পাওয়া যায় বসন্তের শক্তিশালী প্রভাব। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, জীবনানন্দ দাশসহ অনেক কবি-সাহিত্যিক তাদের রচনায় বসন্তের রুপকে তুলে ধরেছেন।
বিশ্ব কবির অনুভূতিতে –
“ আহা, আজি এ বসন্তে
এত ফুল ফোটে, এত বাঁশি বাজে
এত পাখি গায় আহা আজি এ বসন্তে।”
শুধু সাহিত্য নয়, মানুষের মনেও বসন্ত এক নতুন উদ্দীপনা নিয়ে আসে। এই সময় শীতের ক্লান্তি কেটে যায়, কাজের আগ্রহ বাড়ে, মন প্রফুল্ল হয়ে ওঠে। যেন এক নতুন সূচনা।
তবে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বসন্তের স্বাভাবিক রূপ কিছুটা বদলে যাচ্ছে। আগের মত কনকনে শীত না থাকায় বসন্তের আগমনও যেন আর আগের মত নেই। যা বসন্তের অনুভূতিতেও প্রভাব ফেলছে। তবুও বসন্ত মানেই নতুন প্রাণ, নতুন আশা। বসন্ত বারবার ফিরে আসুক নতুন রূপে, নতুন আনন্দ নিয়ে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৫। জেলা: ময়মনসিংহ।