তিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জনমত গঠনে সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
Published : 18 Oct 2024, 02:18 PM
তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিয়ে পরিচিতি পান বাঙালি নারী ইলা মিত্র। ইতিহাসের পাতায় তার পরিচিতি একজন সংগ্রামী নারী, কৃষক নেতা ও বঞ্চিত মানুষের প্রতিনিধি হিসেবে।
ইলা মিত্রের জন্ম ১৯২৫ সালের ১৮ অক্টোবর। তার বাবা নগেন্দ্রনাথ সেন ছিলেন একজন সরকারি কর্মকর্তা এবং অবিভক্ত বাংলার ডেপুটি অ্যাকাউনট্যান্ট জেনারেল। মা মনোরমা সেন ছিলেন গৃহিণী। তিন ভাই ও তিন বোনের মধ্যে ইলা মিত্র ছিলেন জ্যৈষ্ঠ।
ইলা মিত্র গান ও অভিনয়সহ বিভিন্ন সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড ও খেলাধুলায় পারদর্শী ছিলেন। প্রথম বাঙালি মেয়ে হিসেবে ১৯৪০ সালে জাপান অলিম্পিকে অংশ নেওয়ার জন্য নির্বাচিত হন তিনি। যদিও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে সেই অলিম্পিক বাজেয়াপ্ত হলে তার আর অলিম্পিকে খেলা হয়নি।
ইলা মিত্র ১৯৪৪ সালে কলকাতার বেথুন কলেজ থেকে স্নাতক শ্রেণিতে বিএ ডিগ্রি অর্জন করেন। পরে ১৯৫৮ সালে তিনি কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতি বিষয়ে এমএ ডিগ্রি লাভ করেন।
ফ্লোড কমিশন রিপোর্ট বাস্তবায়ন এবং কৃষকদের জমি ভাগাভাগির বিষয় দুটি নিয়ে পুরো দেশ তখন সরকার বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল। আর আন্দোলনের পুরোভাগে ছিল কৃষকরা এবং সামনের সারিতে ছিল সাঁওতালরা। এই আন্দোলনই আজ ইতিহাসে ‘নাচোল বিদ্রোহ’, ‘তেভাগা আন্দোলন’ বা ‘নাচোলের কৃষক আন্দোলন’ ইত্যাদি নামে পরিচিত।
তিনি ১৯৪৬ থেকে প্রায় ১৯৫০ সাল পর্যন্ত রাজশাহীর নবাবগঞ্জ অঞ্চলে তেভাগা আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন। ১৯৪৬ সালে হিন্দু-মুসলমান দাঙ্গার সময় নোয়াখালীর দাঙ্গাবিধ্বস্ত এলাকায় সেবা ও পুনর্বাসনের কাজ করে নানা মহলে ব্যাপক প্রশংসিত হন।
সর্বদা সামনের দিকে সাহসী অবস্থানের জন্য বারবার গ্রেফতার এবং বিভিন্ন মেয়াদে সাজা পেতে হয় এই দৃঢ়চেতা বাঙালি নারীকে। অমানসিক নির্যাতনের শিকার হন তিনি। তবে এতো বাধা বিপত্তির কোনো কিছুই তাকে থামিয়ে রাখতে পারেনি। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় জনমত গঠনে তিনি সক্রিয় ভূমিকা পালন করেছেন।
কর্মজীবনে ইলা মিত্র কলিকাতা সিটি কলেজের বাংলা সাহিত্যের অধ্যাপক হিসেবে ১৯৮৯ সালে অবসর নেন। রাজনীতির পাশাপাশি সাহিত্য চর্চায়ও সরব ছিলেন তিনি।
ইলা মিত্র ২০০২ সালের ১৩ অক্টোবর ৭৭ বছর বয়সে মৃত্যুবরণ করেন। তবে তার সাহসী নেতৃত্বের গল্প ইতিহাসের পাতায় আজীবন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। অনুপ্রাণিত করবে সব প্রজন্মকে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৩। জেলা: ঢাকা।