বাঁধ ভাঙার আতঙ্কে কলাপাড়ার ২০ হাজার মানুষ (ভিডিওসহ)

“আমরা এখন এখানে নৌকা চালাই। নতুন যে বেড়িবাঁধ করা হয়েছে তা ও ভেঙে গেছে। এখন আমাদের এলাকা ঝুঁকিপুর্ণ।”

পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের আন্ধারমানিক নদে দেওয়া বাঁধ ভেঙে যাওয়ার আতঙ্ক নিয়ে রাত কাটাচ্ছে আট গ্রামের ২০ হাজার মানুষ।

ইতোমধ্যে আন্ধারমানিক নদের ভাঙনে ইউনিয়নের জালালপুর গ্রাম সংলগ্ন দীর্ঘ বেড়িবাঁধটির কিছু অংশ নদে বিলীন হয়ে গেছে। যে কোনো সময় বেড়িবাঁধ ভেঙে গোটা এলাকা প্লাবিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ফসলের ব্যাপক ক্ষতির আশঙ্কা করছেন কৃষকরা।

সরেজমিনে দেখা গেছে, সাগর মোহনার জালালপুর গ্রামের বেড়িবাঁধের কিছু অংশ ভেসে গেছে। আন্ধানমানিক নদীর স্রোতের তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে বেড়িবাঁধে ব্যাপকভাবে ভাঙন দেখা দিয়েছে।

স্থানীয় কৃষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ইউনিয়নের অধিকাংশ মানুষ কৃষির উপর নির্ভরশীল। অনেকেই ঋণ নিয়ে ফসল ফলিয়ে ঋণ পরিশোধ করে, সংসার চালায়।

জালালপুর গ্রামেরই বাসিন্দা সিদ্দিক বিশ্বাসের সঙ্গে কথা বলে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

তিনি বলেন, “বেড়িবাঁধটা যদি সম্পূর্ণ ভাইঙ্গা যায় লবণ পানিতে আমাদের মাঠের সব ফসল নষ্ট হয়ে যাবে। আমরা কৃষক যারা আছি ফসল ফলাইয়াও খাইতে পারব না। একবার লবন পানি উঠে গেলে পাঁচ বছরেও আমাদের মাঠে আর ফসল হবে না।”

রুহুল নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, “আমাদের এই বেড়িবাঁধ সম্পূর্ণ ভাইঙ্গা গেলে আমাদের থাকার মতো কোনো জায়গা থাকবে না। জোয়ারে লবণ পানি উঠে আমাদের সব ফসল নষ্ট করে ফেলবে। পুকুর, ঘেরের মাছ চলে যাবে।”

পুরাতন বেড়িবাঁধ ভেঙে নদে চলে গেছে বলে জানালেন আবদুল হাদি নামের আরেক ব্যক্তি।

তিনি বলেন, “আমরা এখন এখানে নৌকা চালাই। নতুন যে বেড়িবাঁধ করা হয়েছে তা ও ভেঙে গেছে। এখন আমাদের এলাকা ঝুঁকিপুর্ণ।”

জামাল উদ্দিন নামের আরেক ব্যক্তি বলেন, “সিডরে পুরনো বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ার পরে নতুন বেড়িবাঁধ তৈরি করা হলেও তা ভেঙে গেছে। জোয়ারের পানি বাড়লেই আমাদের ফসল নষ্ট হয়ে যাবে।”

কথা হয় সাকিব নামের এক শিশুর সঙ্গে। সে বলে, “আমাদের ফসল পাইকা আসছে। রাস্তা প্রায় ভাইঙ্গা গেছে। সম্পূর্ণ ভাইঙ্গা গেলে ফসল নষ্ট হইয়া যাইবে। আমরা খামু কী? আমাদের অনেক ভয় লাগতেছে।”

সাকিবের মতোই এক কৃষক পরিবারের সন্তান ইমরান। সে বলে, “আমাদের মা বাবা কৃষি কাজ কইরা আমাদের খাওয়ায়। যদি লবণ পানি ঢুকে ফসল নষ্ট হইবে। আমাদের ঘেরের মাছ চলে যাবে। লবণ পানিতে আমরা কীভাবে স্কুলে যাব?”

বিলকিস নামের স্থানীয় এক নারী বলেন, “আমরা ফ্যামিলি নিয়ে এই রাস্তার পাশে খাস জমিতে থাকি। যদি রাস্তাটা ভাইঙ্গা যায় আমাদের থাকার কোনো জায়গা থাকবে না। বেড়িবাঁধ বাঁধার জন্য অনুরোধ করছি।”

নীলগঞ্জ ইউনিয়নের সাত নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্যে মো. ফজলুল হক সুমন।

তিনি বলেন, “জালালপুর গ্রামের বেড়িবাঁধ নদীর গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। অল্প একটু টিকে আছে। সবটুকু ভেঙে গেলে জোয়ারের পানি উঠে সম্পূর্ণ এলাকা প্লাবিত হবে। বর্তমানে জমিতে ধান আছে। লবণ পানিতে সব নষ্ট হয়ে যাবে। যদি লবণ পানি ঢুকে যায় পাঁচ-সাত বছরে এই জমিতে ধান হবে না। আমাদের কষ্টের কোন সীমা থাকবে না। তাই এই বেড়িবাঁধটি জরুরী ভাবে মেরামতের অনুরোধ জানাচ্ছি।”

যতক্ষণ পর্যন্ত বেড়িবাঁধ মেরামত না হবে ততক্ষণ পর্যন্ত কয়েকটি ওয়ার্ডের হাজারো মানুষ ঝুঁকিতে থাকবে জানিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মো. বাবুল মিয়া বলেন, “জালালপুর বেড়িবাঁধটি চার থেকে পাঁচ বার সংস্কার করা হয়েছে। কিন্ত মানসম্মত হয়নি। আমি থানা পরিষদের মাসিক মিটিংয়ে বারবার উত্থাপন করেছি। লিখিত ভাবে বলেছি। এ ব্যাপারে ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।”

প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: পটুয়াখালী।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com