ব্রেস্ট ফিডিং: মায়ের পরিচ্ছন্নতা-সুস্থতা কতটুকু দরকার?

“আবুরে তহন দুদ খাওয়াই। তয় ঘাম, ময়লা ধুইয়া সাফ হইবার পারি না। ”
ব্রেস্ট ফিডিং: মায়ের পরিচ্ছন্নতা-সুস্থতা কতটুকু দরকার?

নিম্ন আয়ের পরিবারের মায়েরা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়াতে যেমন অসচেতন, তেমনি পরিচ্ছন্নতার বিষয়ে অনেকেই উদাসীন।

অসুস্থ হলে সন্তানকে দুধ খাওয়ানোও বন্ধ করে দেন বলে জানান কেউ কেউ।

সুরমা আক্তারের বাড়ি ময়মনসিংহের ধোবাউড়ায়। নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে তিনি কাজ করেন। স্বামী ও শাশুড়িকে নিয়ে তিনি ঢাকার আগারগাঁর এক বস্তিতে থাকেন। তার দুই সন্তানের মধ্যে একজনের বয়স তিন বছর, আরেক জনের সাত মাস।

তার সঙ্গে কথা বলে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

সুরমা হ্যালোকে জানান, দিনের বেলায় বাচ্চাকে দুধ খাওয়ানোর সময় পান না। কারণ বাচ্চাকে নিয়ে কাজে আসা যায় না। তবে কখনো কখনো নিরুপায় হয়ে বাচ্চাকে নিয়ে আসেন।

তার ভাষায়, “আবুরে তহন দুদ খাওয়াই। তয় ঘাম, ময়লা ধুইয়া সাফ হইবার পারি না। ”

লিপা বেগম থাকে রাজধানীর পুলপার বস্তিতে। আগে বাসা বাড়িতে কাজ করলেও নতুন সন্তান হওয়ায় এখন আর কাজ করতে পারছেন না বলে জানান। তাই তিনি বিভিন্ন জায়গায় ভিক্ষা করেন। তার সঙ্গে কথা হয় রাজধানীর শংকর বাস স্ট্যান্ডের কাছে। শিশু সন্তানকে কোলে নিয়ে তিনি ভিক্ষা করছিলেন।

বেশ কিছুদিন ধরে তিনি সর্দি, জ্বরে ভুগছেন। সন্তানকে বুকের দুধ পান করানোর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলছিলেন, “শরিল ভালা না। সারাদিন রইদে থাহি, গতর দিয়া ঘামের গন্ধ করে। তবু এর মইদ্দেই দুধ খাওয়াই।”

সুরমা আক্তার বা লিপা বেগমের মতো মায়েরা যদি থাকেন অপরিচ্ছন্ন অবস্থায় কিংবা অসুস্থ, ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হন; তাহলে কি শিশুকে মাতৃদুগ্ধ পান করানো যাবে?

এ বিষয়ে শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজের শিশুরোগ বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. এএসএম মাহমুদুজ্জামানের সঙ্গে কথা বলে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম।

তিনি বলেন, “মায়ের দুধ শিশুর জন্য নিরাপদ ও অত্যাবশকীয় খাবার। এইচআইভির মতো কিছু রোগ কিংবা মায়ের যখন কেমোথেরাপি চলছে বা মা যখন কোনো রেডিয়েশনের সংস্পর্শে আছেন সেই অবস্থা ছাড়া সাধারণ অসুস্থতায় মা বাচ্চাকে বুকের দুধ দিতে পারবে।”

জনশুমারির প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী দেশে বস্তিতে বাস করা মানুষের সংখ্যা প্রায় ১৮ লক্ষ। এই ১৮ লক্ষ মানুষের মধ্যে রয়েছে মা ও দুগ্ধজাত শিশুও। আবার এই মায়েদের বেশিরভাগ শ্রমজীবী। কেউ কাজ করেন বাসা বাড়িতে, কেউ ভিক্ষা করেন, কেউ শিল্প কারখানায় বা নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সময়মতো শিশুকে দুধ খাওয়ানো, এমনকি নিজেদের স্বাস্থ্যগত সমস্যা নিয়েও তারা সচেতন নন।

হ্যালোর সঙ্গে কথা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসক দেবশ্রী পালের।

তিনি বলেন, “একজন মা যখন অসুস্থ থাকেন, তখন সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য তার শরীরে অ্যান্টিবডি তৈরি হয়। এই অ্যান্টিবডিগুলি বুকের দুধ খাওয়ানোর সময় মায়ের দুধে নিঃসৃত হয়ে শিশুর কাছে স্থানান্তরিত হয়।”

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার উদ্ধৃতি দিয়ে তিনি বলেন, “তবে ইবোলার মতো কিছু রোগ যা ব্রেস্ট ফিডিংয়ের মাধ্যমেও ছড়াতে পারে, সেগুলো এবং বিশেষ কিছু রোগ ও পরিস্থিতি ছাড়া অন্য সবসময় শিশুকে মায়ের দুধ পান করানো যায়।”

ডা. দেবশ্রীর মতে, “মায়ের নিপলে বা তার চারপাশে যদি কোনো ক্ষত থাকে তাহলে হাতে পাম্প করে বা ব্রেস্ট মিল্ক সাকশন মেশিনের মাধ্যেমে দুধ বের করে শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে।”

তিনি মনে করেন, মায়ের পরিচ্ছন্ন হয়ে শিশুকে দুধ পান করানো উত্তম।

প্রতিবেদকের বয়স: ১৩। জেলা: ঢাকা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com