চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাল্যবিয়ের হার বেশি কেন?

“আমাদের জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসন সকলে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।"
চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাল্যবিয়ের হার বেশি কেন?

দেশে বাল্যবিয়ের পরিসংখ্যানে চাঁপাইনবাবগঞ্জের অবস্থান দ্বিতীয়। এই জেলায় বাল্যবিয়ের হার ৬৫ দশমিক দুই শতাংশ।

বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ব্র্যাকের ‘বর্ন টু বি অ্যা ব্রাইড, চাইল্ড ম্যারেজ: ট্রেন্ডস অ্যান্ড কজেস’ শিরোনামের এক জরিপে এই তথ্য উঠে আসে। সামাজিক নিরাপত্তার অভাবকে এই বাল্যবিয়ের কারণ বলে দুষছেন অনেকে। অবশ্য কেউ কেউ বলছেন, সচেতনতার অভাবই এসব বাল্যবিয়ের কারণ।

জানা যায়, জেলায় বাল্যবিয়ে সংঘটিত করার জন্য নানা ধরনের কূটকৌশল অবলম্বন করা হয়। আইনের চোখ ফাঁকি দিয়ে, কখনো প্রকাশ্যে আবার কখনো গোপনে বা স্থান বদল করে বাল্যবিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

গণসচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে বাল্যবিয়ে কমিয়ে আনা সম্ভব। এক্ষেত্রে সামাজিক সংগঠনগুলো ভূমিকা রাখতে পারে বলে মত দিয়েছে চাঁপাইনবাবগঞ্জের বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীরা।

জেলার গ্রিন ভিউ স্কুলের শিক্ষার্থী আফসানা আক্তার আঁখি হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলে, “বাল্যবিবাহ রোধে সব থেকে কার্যকারী উদ্যোগ আমার মতে গণসচেতনা সৃষ্টি করা।"

একই বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহিমা মুশফিরাত বলে, “প্রত্যেকটি স্কুলে কিশোর কিশোরী ক্লাব থাকে। ক্লাবের মাধ্যমে সবাইকে আমরা বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে সচেতন করতে পারি।"

জেলার গ্রীন ভিউ স্কুল প্রধান শিক্ষক রোকসানা আহমদ হ্যালোকে বলেন, “আমরা চেষ্টা করি অভিভাবক সমাবেশের মাধ্যমে বা মা সমাবেশের মাধ্যমে অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা তৈরি করতে। আমি সকলকে অনুরোধ করব,আমরা নিজেরা যেন বাল্যবিয়ের সঙ্গে না জড়াই। আমি বলব,এটি বাল্যবিয়ের বিরুদ্ধে আমাদের যুদ্ধ।"

সালমা খানম নামের এক অভিভাবক বলেন, “বাল্যবিয়েটা আসলে আমাদের সমাজের জন্য একটা ব্যাধি। কারণ বাল্যবিবাহ বলতে ছোটবেলায় মেয়েদেরকে কিছুতে আটকে দেয়া হয় তখন আসলে জীবনটা অনেক কষ্টের হয়ে যায়।"

আব্দুল বারি নামের এক কাজী হ্যালোকে বলেন, "আমাদের জানামতে বাল্যবিবাহ আগের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে হয় না। এটা গোপনে স্থান বদল করে,তারপর নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে খোদ আদালত চত্বরে বসেই এসব বাল্যবিবাহ অনুষ্ঠিত হচ্ছে। স্থান পরিবর্তন করে বাল্যবিবাহ সম্পাদন এবং নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বাল্যবিবাহ সম্পাদন বন্ধে জেলা প্রশাসনের তৎপরতা বৃদ্ধি করলে আশা করা যায় যে,এই বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি প্রবণতা কমে আসবে।"

চাঁপাইনবাবগঞ্জে বাল্যবিয়ে সংঘটিত হওয়ার পেছনে অনেক কারণ রয়েছে বলে জানান সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোছা. তাছমিনা খাতুন।

হ্যালোকে তিনি বলেন, “এখানে বেশি সংখ্যক বাল্যবিয়ের জন্য যে কারণ সেটা হচ্ছে, বাবা-মা সরকারি চাকুরিজীবী পেলেই মেয়েদেরকে অল্প বয়সে বিয়ে দিয়ে দিচ্ছে। আরেকটি হলো দরিদ্রতা। এখানে ম্যাক্সিমাম ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে,অশিক্ষিত বাবা মা যারা আছেন তারা কিন্তু সব সময় মেয়েদের বাল্যবিবাহ দিচ্ছেন এবং নিষেধ করার সত্ত্বেও তারা বিষয়টি মানছেন না। এটি প্রতিরোধ করার জন্য আমাদের জেলা প্রশাসন এবং উপজেলা প্রশাসন সকলে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।"

বাল্যবিয়ে বন্ধে আরো কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা প্রশাসক এ কে এম গালিভ খান।

হ্যালোকে তিনি বলেন,"আইন যে ভঙ্গ করবে তিনি আইনের আওতায় আসবেন। আমরা আহ্বান জানাব যে,যে যেখানে খবর পাবে আমাদেরকে খবরটা দিতে হবে। আমরা যত দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

“আমার মনে হয় যে, কিশোরীদের দিয়ে একটা গ্রুপ করলে তাদের মধ্যে এই আন্দোলনটা চমৎকারভাবে কাজ করবে," তিনি যোগ করেন।

প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: চাঁপাইনবাবগঞ্জ।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com