আন্দোলনে নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতার চিত্রও তুলে ধরেন তিনি।
Published : 13 Feb 2025, 01:39 PM
ছাত্র-জনতার আন্দোলনে মানবাধিকার লঙ্ঘন নিয়ে জাতিসংঘের প্রতিবেদন প্রকাশের পর এটিকে হৃদয়বিদারক উল্লেখ করে উদ্বেগ জানিয়েছে ইউনিসেফ।
হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বাংলাদেশে নিযুক্ত ইউনিসেফের প্রতিনিধি রানা ফ্লাওয়ার্স এই উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক কার্যালয়ের প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে তিনি জানান, বাংলাদেশে ১ জুলাই থেকে ১৫ অগাস্টের মধ্যে এক হাজার ৪০০ জন নিহত হয়েছেন যার মধ্যে শতাধিক শিশু রয়েছে।
প্রত্যেকের জন্য শোক প্রকাশ করে রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, "ইউনিসেফ ইতোমধ্যে এসব মৃত্যুর বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরি করেছে এবং আহত ও নিহত শিশুদের সংখ্যা নির্ধারণে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।"
আন্দোলনে নারী ও শিশুর ওপর সহিংসতার চিত্রও তুলে ধরেন তিনি।
তার ভাষ্য, "এ সময় নারীদের বিক্ষোভে অংশগ্রহণ থেকে বিরত রাখার জন্য শারীরিক নির্যাতন ও ধর্ষণের হুমকিসহ নানা প্রকার লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার ঘটনার নথি পাওয়া গেছে।
"শিশুরাও এই সহিংসতা থেকে রেহাই পায়নি। তাদের অনেককে হত্যা করা হয়, পঙ্গু করে দেওয়া হয়, নির্বিচারে গ্রেপ্তার করা হয়, অমানবিক অবস্থায় আটক করে রাখা হয় এবং নির্যাতন করা হয়।"
শিশুদের ওপর সহিংসতার চিত্র তুলে ধরতে তিনটি ঘটনা তুলে ধরেন রানা ফ্লাওয়ার্স।
তিনি বলেন, "এমন একটি হৃদয়বিদারক ঘটনা ঘটে ধানমন্ডিতে যেখানে ২০০টি ধাতব গুলি ছোড়ার কারণে ১২ বছর বয়সী এক বিক্ষোভকারী অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণের ফলে মারা যায়। আরেকটি মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে নারায়ণগঞ্জে। সেখানে ছয় বছর বয়সী এক কন্যাশিশু তার বাড়ির ছাদে দাঁড়িয়ে সংঘর্ষ প্রত্যক্ষ করার সময় মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়।"
তিনি ৫ অগাস্টকে বিক্ষোভের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর দিন উল্লেখ করে বলেন, "এদিন পুলিশের গুলি চালানোর বর্ণনা দিয়ে আজমপুরের ১২ বছর বয়সী একটি ছেলে বলে 'সব জায়গায় বৃষ্টিপাতের মত গুলি চলছিল'। সে অন্তত এক ডজন মৃতদেহ দেখতে পেয়েছিল সেদিন।"
বাংলাদেশের শিশুদের সঙ্গে যেন আর কখনো এমনটি না ঘটে, তা নিশ্চিত করার জন্য সবাইকে একযোগে কাজ করার পক্ষে তিনি। তাই শিশুদের সুরক্ষা নিশ্চিতে জরুরি ভিত্তিতে তিনটি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি।
রানা ফ্লাওয়ার্স বলেন, "প্রথমত যেসব শিশুরা প্রাণ হারিয়েছে এবং তাদের শোকাহত পরিবারারের জন্য জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা এবং প্রয়োজনীয় কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।"
এরপর তিনি জোর দেন, যারা এখনও আটক আছে এবং যাদের জীবন এই ঘটনাগুলো দ্বারা প্রভাবিত হয়েছে, তাদের পুনর্বাসন ও ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার ব্যাপারে।
তৃতীয়ত এবং সম্ভবত সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে বিবৃতিতে তিনি বলেন, "এই সময়টাকে ইতিবাচক পরিবর্তনের জন্য সার্বিকভাবে কাজে লাগাতে হবে। সব রাজনৈতিক নেতা, দল এবং নীতিনির্ধারকদের পুলিশ এবং বিচার ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য একজোট হতে হবে যাতে বাংলাদেশের কোনো শিশুকে আর কখনও এমন বিচার বহির্ভূতভাবে ও যথাযথ প্রক্রিয়ার অভাবে আটক থাকতে না হয়। শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করার, যেটা কিনা তাদের অধিকার, সেজন্য নির্যাতন ও সহিংসতার শিকার হতে না হয়।"
জবাবদিহিতা এবং সংস্কারের এই আহ্বানে ইউনিসেফ সহায়তা করতে চায় বলেও উল্লেখ করেন রানা ফ্লাওয়ার্স।
সবশেষে তিনি বলেন, "বাংলাদেশ এখন বড় এক পরিবর্তন, প্রত্যাশা ও রূপান্তরের দ্বারপ্রান্তে। সংস্কার কমিশনগুলো বর্তমানে পুলিশ, আদালত ও বিচারব্যবস্থার পুনর্নির্মাণে কার্যকর উপায় খুঁজে বের করতে কাজ করছে, যা তরুণ প্রজন্মের জন্য একটি নিরাপদ ও আরও ন্যায়সঙ্গত পরিবেশ তৈরি করতে সহায়তা করবে।"
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।