শিশুদের স্কুলে না পাঠানোর বিষয়ে ফাতেমা নামের এক অভিভাবক বলেন, “আমরা রাস্তা-ঘাটে থাকি। বাচ্চাকাচ্চা লেখাপড়া করাতে চাই কিন্তু পারি না। নিজেরাই চলতে পারি না। কামাই করব না খাব না বাচ্চাদের লেখাপড়া করাব? আমরা কোনোটাই পারি না।
Published : 29 Nov 2023, 07:17 PM
পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার কালাইয়া বাউফল সড়কের পাশে একটি বেদে পল্লীতে শতাধিক বেদে নারী-পুরুষ ও শিশু বাস করছে। জানা যায়, স্থায়ী ঠিকানা না থাকায় বেদে জনগোষ্ঠীর অন্যান্য শিশুদের মতো এখানকার শিশুরাও স্কুলে যাওয়ার সুযোগ পায় না। শিক্ষার সুযোগ বঞ্চিত এই শিশুরা বাল্যবিয়েরও শিকার হচ্ছে অনায়াসে।
বেদে পল্লী ঘুরে যায়, মানবেতর জীবন যাপন করছে তারা। বাঁশ ও পলিথিনের তৈরি বসবাসের ঘরগুলো বেশ জীর্ণশীর্ণ।
এখানকার বাসিন্দারা জানান, বেদে পল্লীর শিশুরা জীবিকার তাগিদে অল্প বয়সেই পূর্ব পুরুষদের মতো সাপ খেলা দেখানো ও তাবিজ বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করে।
বাল্যবিয়ের শিকার বেদে পল্লীর এক কিশোরীর সঙ্গে কথা বলে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম। বৈশাখী নামের ১২ বছরের এই কিশোরী হ্যালোকে বলে, “আমার বিয়া হইয়া গ্যাছে। আমার ১২ বছর বয়াস। আমরা স্কুলে পড়তে চাইছিলাম কিন্তু পারি নাই তাই বিয়ে দিয়ে দিছে। আমগো ভিতরে ছোটো থাকতেই সবটিরে বিয়ে দিয়ে দেয়। বাপ-মা চলতি পারে না এজন্য আমরা লেখাপড়া করতি পারি না।”
বৈশাখী হ্যালোকে আরও বলে, “আমগোও পড়ালেখা করার সখ ছিল, কিন্তু পারি নাই। পারলে কি আর এইভাবে করে ছোট থাকতে কারোরে বিয়ে দিয়ে দিত?”
শিশুদের স্কুলে না পাঠানোর বিষয়ে ফাতেমা নামের এক অভিভাবক বলেন, “আমরা রাস্তা-ঘাটে থাকি। বাচ্চাকাচ্চা লেখাপড়া করাতে চাই কিন্তু পারি না। নিজেরাই চলতে পারি না। কামাই করব না খাব না বাচ্চাদের লেখাপড়া করাব? আমরা কোনোটাই পারি না।
“তাই তো, আমাদের বাচ্চারা আমাদের মতো সিঙ্গা লাগায়, সাপ ধরে, খেলা দেখায়।”
ববিরুল নামের আরেক অভিভাবক হ্যালোকে বলেন, “এই যে আপনারা বলেন পড়ালেখার কথা। আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়ালেখা করাতে হলে তো একটি থাকার জায়গা দরকার একটা ঘর দরকার। আমরা তো থাকি রাস্তায় রাস্তায়, মাইনষের জাগায়। মাইনষের জায়গায় থাইকা কি বাচ্চকাচ্চা পড়ানো যায়? আমরা নিজেরাই চলতে পারি না। বাচ্চাকাচ্চা কী পড়ামু?”
সরকারি সুযোগ সুবিধা পেলে শিশুদের স্কুলে পাঠাতে চান বেদে পল্লীর অভিভাবকেরা। বেদে পল্লীর বয়োবৃদ্ধ সদস্য লিটন মিয়া বলেন, “যদি আমরা সরকারের কোনো সহয়তা পেতাম তবে বাচ্চাদর জন্য কিছু করতে পারতাম। কিন্তু সরকার তো কিছু করতেছে না।”
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: পটুয়াখালী।