শিশুদের উপর এর প্রভাব সম্পর্কে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান ডিসিপ্লিনের অধ্যাপক ড. দিলীপ কুমার দত্ত বলেন, "সমাজের সবচেয়ে দুর্বলতম মানুষ হলো শিশু। প্রাকৃতিক দুর্যোগ হলে প্রথমে তার ফুড সিকিউরিটিতে সমস্যা হবে, নিউট্রিশনের সমস্যা হবে, তার বেসিক জীবন ধারণের জন্য যে কন্ডিশনগুলো আছে সেগুলোতেও সমস্যা হবে।
স্কুলগামী শিশুদের কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, “আমাদের কাছে অনেকগুলো ছবি আছে যেখানে দেখা যাচ্ছে শিশুরা জলাবদ্ধ জায়গা পার হয়ে স্কুলে যাচ্ছে, অনেক দিন স্কুল বন্ধও থেকেছে।"
সিরাজুম মুনিরা নামের স্কুলগামী এক শিক্ষার্থী বলে, "আমি মংলা বন্দরে আবাসিক এলাকায় থাকি। আগে এখানে কখনো পানি জমতে দেখতাম না, কিন্তু এ বছর এত ভারি বৃষ্টিপাত হয়েছে যে আমাদের বাসার নিচে পানি জমে গেছে। আমাদের স্কুলে পানি পর্যন্ত ঢুকেছিল।"
সে যোগ করে, "জলবায়ু পরিবর্তন যে আমাদের পরিবেশে সমস্যা সৃষ্টি করছে তা না। সামাজিকভাবে অনেকটা পিছিয়ে দিচ্ছে। অনেক মানুষের কর্মসংস্থান নষ্ট হয়ে গেছে।"
ইসরাত জাহান নামে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীর সাথে কথা হয় হ্যালোর। সে বাগেরহাটের শরণখোলা উপজেলার বাসিন্দা।
সে বলছিল, "প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে অনেক বাবা-মায়ের উপার্জন ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। অসচ্ছলতার কারণে মেয়েদেরকে বোঝা মনে করা হয় আমাদের এই অঞ্চলে । তখন মনে করে ওই ছোট মেয়েটাকে অন্য একটা পরিবারে বিয়ে দিলে তার ভারটা কমে যাবে। সে খেয়ে পরে বাঁচতে পারবে ওই পরিবারে গিয়ে।"
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) জেলা আহ্বায়ক মো. নূর আলম শেখ বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য শিশুরা মোটেই দায়ী নয়। যেহেতু এটি মানুষের সৃষ্টি করা একটি সঙ্কট, কাজেই মানুষ এর জন্য কম দায়ী নয়। অতিরিক্ত কার্বন নিঃসরণের কারণেই এই জলবায়ু পরিবর্তন ঘটছে। শিকার হচ্ছে আমাদের মতো দেশ।"
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপ-মন্ত্রী বেগম হাবিবুন নাহার বলেন, "শুধু জলবায়ু পরিবর্তনে কারণে নয়, যেকোনো কারণে একটা পরিবার কিংবা একটা অঞ্চল যখন ভুক্তভোগী হয়, তখন সবার আগে ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশুরাই। তো সেই হিসাবে শিশুরাই অবশ্য বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
“সত্য কথা বলতে কি, আমরা এখনো কোনো পদক্ষেপ নিতে পারিনি। আমরা শুধু বলে যাচ্ছি।”
জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য উন্নত দেশগুলোকে দায়ী করে মন্ত্রী বলেন, “যারা পদক্ষেপ নেবে, সেগুলো বাস্তবায়িত করবে তাদের দিক থেকে সেরকম কোনো অগ্রগতি নেই। বিশেষ করে তারা ক্ষতিপূরণ তো মনেই করে না সেটা, তারা মনে করে বেশি হলে সহায়তা করতে পারে বা ঋণ দিতে পারে। ক্ষতিপূরণের এই শব্দটাই তাদের কাছে পছন্দনীয় না।”
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: বাগেরহাট।