‘এলাকাবাসী বলত, মেয়েদের কোনো খেলা নেই’

মাঠে ফুটবল নিয়ে অনুশীলন করতে গেলে গ্রামের মানুষই সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াত, তাদের কেউ কেউ বলতেন, "মেয়েদের কোনো খেলা নেই।"
‘এলাকাবাসী বলত, মেয়েদের কোনো খেলা নেই’

'কলসিন্দুরের অদম্য কিশোরী' শীর্ষক হ্যালোর এক গোলটেবিল বৈঠকে নিজেদের অভিজ্ঞতা তুলে ধরতে গিয়ে কিশোরী ফুটবলার সীতা এ কথা বলে।

সে বলছিল, "প্রথমে পরিবার দিত না যদিও আমার খেলা প্র্যাক্টিসের আগ্রহ ছিল। এলাকাবাসীরা বলত মেয়েদের কীসের খেলা, মেয়েদের কোনো খেলা নেই। ছেলেদের খেলা মেয়েরা কেন খেলবে। তারপর আমাদের ইচ্ছে করত ছেলেরা খেলে, আমরাও খেলব। নিজের আগ্রহের কারণে প্র্যাক্টিসও আলাদা করতাম।"

ময়মনসিংহের কলসিন্দুরের তিন ফুটবলার কন্যাকে নিয়ে এই বৈঠকটি সোমবার বেলা ১২টায় জেলার দূর্গাবাড়ী রোডের গ্রীন পার্ক রেস্টুরেন্ট থেকে হ্যালোর ফেইসবুক পাতায় সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

এই আলোচনায় কলসিন্দুরের তিন ফুটবলার সীতা, আমেনা ও সেলিনা ছাড়াও এই দলের কোচ জুয়েল মিয়া, কলসিন্দুর স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ও এই ফুটবল দলের ব্যবস্থাপক মালা রানী সরকার, ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র মো. ইকরামুল হক টিটু, কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শাহ কামাল আকন্দ ও হ্যালোর এক দল শিশু সাংবাদিক অংশ নেয়।

আলোচনায় ফুটবলার এই কিশোরীদের তারকা হওয়া ও এর পেছনের সংগ্রামের কথা উঠে আসে। জানা যায়, খেলার শুরুতে তাদের কীভাবে পারিবারিক ও সামাজিক বাধার শিকার হতে হয়।

আগ্রহ থাকলে বড় হওয়ার পথে কোনোকিছুই বাধা হতে পারে না বলে মনে করে ফুটবল কন্যা আমেনা।

বড় ভাই 'মাওলানা' হওয়ায় লুকিয়েও খেলার প্রস্তুতি নিতে হতো বলে জানায় ফুটবলার সেলিনা। তবে তার বাবা তাকে উৎসাহ দিয়েছেন।

এই কিশোরীদের দক্ষ ফুটবলার হিসেবে গড়ে তুলতে কোন ধরনের সুযোগ বৃদ্ধি করা উচিত- এই প্রশ্নের জবাবে দলের ব্যবস্থাপক মালা রানী সরকার বলেন, "এই সকল নারী খেলোয়াড়রা প্রায়ই পুষ্টির অভাবে ভোগেন। তাই তাদের পুষ্টিকর খাবারের জন্য সরকারি ভাতার ব্যবস্থা করা উচিত। এছাড়া গ্রামের খেলার মাঠে নারীদের নানা রকম সমস্যায় পড়তে হয়।"

এর প্রেক্ষিতে কোতোয়ালি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নারী খেলোয়ারদের শতভাগ নিরাপত্তা দেওয়ার চেষ্টা করবেন বলে আশ্বাস দেন।

ময়মনসিংহ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র জানান, খেলার প্রতিভা থাকা সত্ত্বেও বাধার কারণে অনেক মেয়েরা খেলতে পারেননি। তিনি নারী খেলোয়াড়দের সব সুযোগ সুবিধা প্রদান করছেন এবং ভবিষ্যতে করবেন বলেও জানান।

মেয়র বলছিলেন, "কলসিন্দুরের পথ ধরে আজকে প্রত্যেকটি উপজেলায় আমরা যখন দেখি এই ধরনের আয়োজন হয় সত্যিই আমাদের বিষ্মিত করে।"

জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জানান, তারা নারী ফুটবল খেলার উন্নতির জন্য 'জেলা পরিষদ কাপ' নামে একটি খেলার পৃষ্ঠোপোষকতা করছেন। এছাড়াও মহিলা ক্রিয়া কমপ্লেক্স অব্যবহৃত থাকায় এ বছর এর জন্য ৩০ লক্ষ টাকা বরাদ্দ দিয়েছেন।

অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনা করে হ্যালোর শিশু সাংবাদিক গুলেনূর আলম মারিয়া এবং আকিব রিয়াদ। এ ছাড়াও সঙ্গে যুক্ত ছিল শিশু সাংবাদিক জিন্নাত আরা আনিকা। আয়োজনটি প্রযোজনা করেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সহকারী প্রযোজক ইসরাত জাহান মণিকা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com