শিক্ষার্থীর উদ্যোগে কোরবানীর গরু মিলছে অনলাইনে

মহামারিতে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় দীর্ঘ অবসরকে কাজে লাগিয়ে উদ্যোক্তা হয়েছেন সাকিফ নামের এক বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী।
শিক্ষার্থীর উদ্যোগে কোরবানীর গরু মিলছে অনলাইনে

মাহিন রহমান সাকিফের বাড়ি নেত্রকোণা সদরে। তিনি একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী। গেল বছর দেশ যখন অবরুদ্ধ পরিস্থিতি পার করছিল তখনই তার মাথায় আসে অনলাইনে গরু বিক্রির পরিকল্পনা। সে বছর তার ছয়টি গরু বিক্রি হয়। সেখান থেকে অনুপ্রাণিত হয়ে এবারও কুরবানির ঈদকে সামনে রেখে তিনি অনলাইনে গরু বিক্রি করছেন।

সাকিফ হ্যালোকে বলেন, "বিজনেসটা আমি একাই হ্যান্ডেল করি। তবে বিভিন্ন সময়ে গরু দেখাশোনার জন্য খণ্ডকালীন সহযোগীও নিই। তাদের আমি বেতন দেই। তবে আমি নিজেই মাঠে গিয়ে গরু দেখি, আমিই আবার ইন্টারনেটে ছবি আপলোড করি, আমিই কাস্টমারের সাথে যোগাযোগ করি। মানে এই কাজগুলো আমি একাই করি।"

তার এই উদ্যোগে পরিবারের সমর্থন নিয়ে তিনি বলেন, "আমার পার্সোনাল কিছু সেভিংস ছিল সেটা দিয়েই আমি ব্যবসায় নেমেছি। আমার মা গত বছর মারা গেছেন। বাবা মানা করতেন, কারণ তিনি কাজটাকে একটু ঝুঁকিপূর্ণ মনে করেন। গত বছর এমনও হয়েছে আমি প্রায় ৬০ ঘণ্টা ট্রাকে আটকে ছিলাম এই গরুর ডেলিভারি নিয়ে। তবে আমার বড় ভাইসহ বন্ধু, স্বজন সবাই আমাকে সাপোর্ট দিচ্ছেন।"

গত বছর অগাস্টে সাকিফের মা মারা যান। এরপর মায়ের নামে তার প্রতিষ্ঠানের নাম দেন 'হাসিনা এগ্রো'। মূলত ঢাকা থেকেই তার অর্ডার আসে।

নেত্রকোণার বিভিন্ন গরুর খামার বা মালিকের কাছ থেকে কিনে তিনি নিজেই পৌঁছে দেন গ্রাহকের বাড়িতে।

ক্রেতারা কেমন সাড়া দিচ্ছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, "আমার চাওয়া শুধু এইটাই যে কাস্টমাররা সন্তুষ্ট থাকুক। গত বছর ছয়টা গরুই আমি ঢাকায় বিনামূল্যে হোম ডেলিভারি দিয়েছি। এছাড়াও এক, দুই দিন যে খাবার খাবে তাও দিয়ে আসি যাতে তাদের বাসা থেকে বের হতে না হয়। সবাই খুশি হয়েছেন।"

ব্যবসার প্রসারে কী কী উদ্যোগ হাতে নিয়েছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, "ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানোর জন্য আমি ফেইসবুককে বেছে নিয়েছি। পেইজে সব তথ্য তুলে ধরি। কেউ দেখতে চাইলে ভিডিও কলে দেখাই। আনুমানিক একটা ওজন বলি। তাছাড়া আমি ওষুধ খাওয়ানো গরু কিনি না। কারণ আমি জানি এটা মানব দেহের জন্য কতটা ক্ষতিকর। বেশ যাচাই-বাছাই, খোঁজ খবর নিয়ে গরু কিনি। গরু সবল কিনা, হাঁটতে পারে কিনা, শিং ঠিক আছে কিনা সবকিছু যাচাই করি। ভালো সেবা দেওয়ার চেষ্টা করি। সব মিলিয়ে তারা আস্থা রাখছেন আমার ওপর।"

ব্যবসা করতে গিয়ে পড়াশোনার ক্ষতি হয় কি? জবাবে সাকিফ বলেন, "আসলে মাঝে মাঝে কিছুটা হলেও হ্যাম্পার হয়। এমন অনেক সময় গেছে, যখন আমাকে হাট থেকে অনলাইন ক্লাস করতে হয়েছে। অনেক সময় দেখা যায়, কোনো একটা গরু দেখতে গেছি ওখান থেকেই ক্লাসটা করতে হচ্ছে আমাকে। তখন একটু চাপ পড়ে যায়। তবুও পড়াশোনা আর ব্যবসা দুটোকেই কীভাবে এক সঙ্গে চালানো যায় তার চেষ্টা করি।”

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com