দেশে দেশে ঈদ: কোথাও কড়াকড়ি, কোথাও ছাড়

মহামারিতেই আবার এসেছে মুসলমানদের বড় ধর্মীয় উৎসব ঈদুল ফিতর। হ্যালো জানার চেষ্টা করেছে কোন দেশে কীভাবে তা উদযাপিত হবে।
দেশে দেশে ঈদ: কোথাও কড়াকড়ি, কোথাও ছাড়

বাংলাদেশের ধর্ম মন্ত্রণালয় বেশ কিছু নিয়ম আরোপ করেছে। বলা হয়েছে, সবাইকে বাসা থেকে ওজু করে মসজিদে যেতে হবে, পরতে হবে মাস্ক। কাতারে দাঁড়াতে হবে দূরত্ব রেখে। নামাজ শেষে কোলাকুলি বা হাত মেলানো যাবে না। ঈদগাহ বা খোলা মাঠে ঈদের জামাত হবে না। নামাজ অনুষ্ঠিত হবে মসজিদে। 

রাশিয়ার মস্কো শহরের বলশায় পোচটোয়া এলাকায় থাকে রামিস জারা। ইউরোপীয় জিমনেসিয়াম স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী সে।

জারা হ্যালোকে বলে, "আমাদের শহরে মহামারি কমে আসায়  স্কুল এখন খোলা। তবে ১২ বছরের অধিক বয়সী সকলের জন্য মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। ঈদের জন্য আমাদের কোনো আলাদা ছুটি নেই। নেই কোনো বিধিনিষেধও। তাই স্কুল শেষে পরিবারের সাথেই সে উৎযাপন করবে ঈদ। পরিকল্পনা আছে কাছে কোথাও বেড়াতে যাবারও।"

অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্নের টার্নেইটের বাসিন্দা আসমা সুলতানা হ্যালোকে বলেন, "বর্তমানে খুব বেশি বিধিনিষেধ নেই এখানে, কেবল গণপরিবহনে সবার মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। তাছাড়া একেক রাজ্যে একেক ধরনের বিধিনিষেধ চালু করা হয়েছে।”

সেখানে ক্রিসমাস আর ইস্টার ছাড়া অন্য কোনো ধর্মীয় উৎসবের জন্য ছুটি দেওয়া হয় না। তাই, ঈদের ছুটি বলতে আলাদা কিছু নেই। তবে মুসলিমরা ঈদের দিনটা ডে অফ নিয়ে থাকেন। প্রতিবারের মতো এবারও ঈদের জামাত অনুষ্ঠিত হবে মসজিদে। বাসায় অতিথীরা আসবেন আর দুপুর বা রাতের দিকে অন্যদের বাসায় বেড়াতে যাওয়ার চিন্তাভাবনা আছে বলে জানান তিনি।

মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো মুসলিম সংখ্যা গরিষ্ঠ হওয়ায় বড় ভাবেই উদযাপিত হয়ে থাকে দিনটি। সৌদি আরবের জিজান শহরে ব্যবসা করেন হুমায়ূন কবির।

তিনি হ্যালোকে বলেন, "মহামারি বিবেচনায় বেশ কড়াকড়ি অবস্থানে রয়েছে সৌদি প্রশাসন। জনসাধারণের চলাচলের সময় মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে, না পরলে করা হচ্ছে এক হাজার রিয়াল জরিমানা। যারা দোকান মালিক তাদের জন্যও আলাদা দিকনির্দেশনা রয়েছে। তাপমাত্রা পরিমাপ করার জন্য বিশেষ যন্ত্র, মাস্ক, হ্যান্ড স্যানিটাইজার দোকানে রাখা বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মাস্ক থুতনিতে নামিয়ে রাখাকেও একইভাবে জরিমানার আওতায় আনা হচ্ছে।"

তিনি আরও বলেন, "ঈদ উপলক্ষে ১০ দিনের ছুটি দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ ঈদের জামাত হবে মসজিদে, ভিড় এড়ানোর জন্য জামায়াতের সংখ্যা অনেক বাড়ানো হয়েছে অন্যান্য বারের চেয়ে।"

অন্যান্য সময় ঈদের দিন বিকালের দিকে দোকান খোলা হলেও এবারের ঈদের দিন সকালে নামাজ শেষ করে বাকি সময়টা বাসাতেই কাটানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি।

নুরুল ইসলাম নামে আরেকজন জানান, কড়াকড়ির মধ্যেই উদযাপন করতে হবে ঈদ।

হ্যালোকে তিনি বলেন, “আমি যেহেতু মার্কেটে কাজ করি সেহেতু অধিকাংশ সময়ই আমাকে এখানে অবস্থান করতে হয়৷ আমি সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলি এবং যারা কেনাকাটার জন্য এখানে আসেন তাদেরও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই আসতে হয়। প্রবাসে ঈদ যেহেতু পরিবার ছাড়াই একা একা পালন করতে হয়। বেশ কয়েক বছর ভালোই কেটেছে। এখানকার আরও বাংলাদেশিদের সাথে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নিয়েছি। কিন্তু অন্য বছরগুলোর তুলনায় এবারের ঈদ একটু ভিন্ন অভিজ্ঞতায় কাটবে বলে মনে করছি।”

নানান বিধিনিষেধ রয়েছে কানাডার টরেন্টো শহরেও। এই শহরের স্কার্বরো এলাকায় থাকেন নিশাত মাশরুর। চাকরি করছেন একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে। 

তিনি হ্যালোকে বলেন, "টরেন্টোতে চলছে লকডাউন। স্কুল, কলেজ, দোকান পাট কার্যত বন্ধ। রয়েছে লোক সমাগম ও অতিথি আপ্যায়নে নিষেধাজ্ঞা। তাই এবারো বাঙালি কমিউনিটির সবাই একত্রিত হয়ে ঈদ পালন করা হবে না। কেউ যেতে পারবে না কারো বাড়িতে। তবে স্বাস্থ্যবিধি মেনে পার্কে যাবার অনুমতি আছে। তাই ঈদের নামাজ শেষে পরিবার নিয়ে কোনো পার্কে বেড়াতে যাবার ইচ্ছা আছে।"

মালেশিয়ার ইন্টারন্যাশনাল ইসলামিক ইউনিভার্সিটিতে সহকারী গবেষক হিসেবে কর্মরত আছেন আব্দুল্লাহ আল মাসুদ।

তিনি হ্যালোকে বলেন, "এখানকার বিধিনিষেধ অনেক কঠোর। সব সময় বাসায় থেকেই সবকিছু করতে হচ্ছে। প্রয়োজন ছাড়া বাসার বাইরে একদমই বের হওয়া যায় না। রমজান মাসের পুরোটা সময় জুড়ে তারাবিহ, ইফতার সবকিছু বাসাতেই করেছি। নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র কেনার জন্যই বাসা থেকে বের হই। তবে সর্বোচ্চ স্বাস্থ্যবিধি মেনেই তারপর।"

তিনি আরও বলেন, "স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘন করলে সরকারের পক্ষ থেকে করা হচ্ছে জরিমানা। মাস্ক ছাড়া বের হলেই গুনতে হবে ১০০০ রিঙ্গিত। কড়া বিধিনিষেধ মেনেই ঈদ অনুষ্ঠিত হবে। পরিস্থিতির জন্য সব মেনে নিতে হবেই।"

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com