বৃহস্পতিবার ভোরে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের শরণখোলা রেঞ্জের ধানসাগর ফরেস্ট স্টেশন এলাকা থেকে গভীর বনে পথ ভুলে আটকে পড়ে ছয় কিশোর।
এবার ঈদে এই কিশোর দল পরিকল্পনা করে সুন্দরবনে বেড়াতে যাওয়ার। যেই ভাবা সেই কাজ। বুধবার সকালে তারা চলে আসে সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের ধানসাগরে।
ধানসাগর এলকায় বনরক্ষীদের খাল পারাপারের জন্য রয়েছে কাঠের পুল। তবে এটি সর্বসাধারণের ব্যবহারের জন্য নয়। তবে তারা এই পুল দিয়েই পার হয়, এরপর হারিয়ে যায় গভীর জঙ্গলে।
ভয় পেয়ে যখন বেরিয়ে আসতে চায় তখন বুঝতে পারে তারা পথ হারিয়ে ফেলেছে। ধীরে ধীরে সুন্দরবনের গভীরে ঢুকে যায়।
ছয়জনের মধ্যে মোবাইল ছিল তিনজনের কাছে। এর মধ্যে দুইজের মোবাইলে ছিল না চার্জ। একজন ফোন দেয় দেয় জরুরি সেবার নম্বর ৯৯৯-এ। গভীর অরণ্যে বৃষ্টি আরো বিপদে ফেলে কিশোরদের।
সেই ছয় জনের একজন ইমরান খলিফা। ইমরান হ্যালোকে বলে, " আমরা নতুন গিয়েছিলাম। কিছু ভিতরে যাওয়ার পরে রাস্তা হারিয়ে ফেলি। আমরা যখন বের হওয়ার চেষ্টা করছি, তখন বাইরে বের না হয়ে আরো ভিতরে ঢুকছি।”
ইমরান আরও বলে, "ফোনে চার্জ ছিল না, অল্প চার্জ ছিল সেটা দিয়েই কল করি।
"আমাদের ভেতর জয় নামের একজন বলে ৯৯৯ নম্বরে কল দে। তাহলে পুলিশ আমাদের সাহায্য করবে। ঐ নম্বরে কল দিয়ে পুলিশকে জানালে পুলিশ আমাদের সাহায্য করে। তারপর রাত চারটার সময় পুলিশ আমাদেরকে উদ্ধার করে।"
দলের বাকি পাঁচ কিশোর হলো শরণখোলা উপজেলার দক্ষিণ আমড়াগাছিয়া গ্রামের জয় খলিফা, মাইনুল ইসলাম, এসএসএসি পরীক্ষার্থী জুবায়ের খলিফা,মাদ্রাসা শিক্ষার্থী আব্দুর রহিম খলিফা ও সায়মন খলিফা।
শরণখোলা থানার ওসি এসকে আব্দুল্লাহ আল সাইদ হ্যালোকে জানান প্রায় তিন কিলোমিটার ভেতরে চলে গিয়েছিল তারা।
তিনি বলেন, "সন্ধ্যার পর থেকে আমরা অভিযান শুরু করি। সুন্দরবনের প্রায় তিন কিলোমিটার ভেতরে গভীর বনে বৃষ্টি ভেজা অবস্থায় ছিল। ফোনে তাদের সাথে যোগাযোগ করতে থাকি। অবশেষে ভোর চারটায় তাদের উদ্ধার করি।”
মসজিদে মাইকিং করা হলে আটকে পড়া কিশোররা তা শুনতে পাচ্ছে কিনা সেটা ফোনে জেনে নেন অভিযানে থাকা পুলিশরা। এভাবে তাদের অবস্থান অনুমান করা হয়। একটা সময় পুলিশ কাছাকাছি চলে এলে বলা হয়, পুলিশ হাঁক তুলবে এবং সেই হাঁক শুনলে কিশোররা যেন উচ্চস্বরে তার জবাব দেয়। এরপর কিশোরদের ভেসে আসা জবাবের উৎস ধরে এগিয়ে যেতে থাকে তারা। এভাবেই উদ্ধার করা হয় ছয় কিশোরকে। বন এবং কেওড়ার শ্বাসমূল, লতাগুল্ম, ঝোপঝাড় পেরিয়ে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে পুলিশ বাহিনীকে। এমন রোমহর্ষক কাহিনী সিনেমার চেয়ে কম কী!
উদ্ধারের বর্ণনা দিতে গিয়ে সাইদ বলেন, "সুন্দরবনের ভেতরে রাস্তা ঘাট চেনা যায় না। তাছাড়া বাঘের ভয় আছে। রাতের অন্ধকারে খুব ঝুঁকি নিয়ে গিয়েছি। সকালে তাদেরকে মিষ্টিমুখ করিয়ে অভিভাবকের হাতে তুলে দেই।"