চাল বিতরণ: কালিহাতীকে ‘বদলে দিল’ কিশোর

করোনাভাইরাসের বৈশ্বিক মহামারিতে সংকটে পড়া মানুষদের অল্পমূল্যে খাদ্য সামগ্রী প্রদানে বাংলাদেশ সরকারের সর্ববৃহৎ সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনায় একটি অ্যাপ তৈরি করেছে দ্বাদশ শ্রেণির এক শিক্ষার্থী।
চাল বিতরণ: কালিহাতীকে ‘বদলে দিল’ কিশোর

রাজধানী ঢাকা থেকে একশ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত টাঙ্গাইলের কালিহাতীতে জন্ম ও বেড়ে উঠা এই কিশোরের নাম আল আমিন।

তার উপজেলায় এরই মধ্যে এই অ্যাপটি ব্যবহার শুরু হয়েছে। জেলার আরো ১১টি উপজেলায়ও শিগগিরই চালু হচ্ছে এই অ্যাপ।

ওপেন মার্কেট সেল বা ওএমএস নামে সরকারি এই কর্মসূচির আওতায় ৫০ লাখ মানুষকে কমমূল্যে খাদ্য সামগ্রী দেওয়া হয়। করোনাভাইরাসের এই সময়ে নতুন করে আরো ৫০ লাখ মানুষকে বিশেষ ওএমএস রেশন কার্ড দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার।

সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে না পারা এবং দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে এই কর্মসূচির বিরুদ্ধে। সমালোচনার মুখে সাময়িকভাবে স্থগিত রয়েছে বিশেষ ওএমএস কর্মসূচি।

করোনাভাইরাসের এই সময়ে সরকারের সর্ববৃহৎ এই সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিটির বড় দুই সমস্যার সমাধান এই অ্যাপ করতে যাচ্ছে বলে মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা।

ওএমএস কর্মসূচি

সরকারের দুই ধরনের ওএমএস কর্মসূচি আছে। নিয়মিত ওএমএস এবং বিশেষ ওএমএস।

ওএমএসের চাল দেয়া হয় ডিলারদের মাধ্যমে। নিয়মিত ডিলাররা কার্ডধারীদের নির্দিষ্ট স্থানে লাইনে দাঁড় করিয়ে টিপসই নিয়ে চাল দেয়। একজন উপকারভোগী সপ্তাহে পাঁচ কেজি করে চাল নিতে পারেন। তবে সপ্তাহে মোট তিনদিন এই চাল বিক্রি হয়। তাই অভিযোগ রয়েছে, অনেকে একাধিক দিনও চাল নেন। আবার অনেকে বঞ্চিত হন। যেহেতু এনালগ পদ্ধতিতে হিসাব রাখা হতো, তাই হঠাৎ করে এই অসামঞ্জস্যতা ধরাও কঠিন। আবার এই অসামঞ্জস্যতার সুযোগে ডিলারদের অনেকে নিয়ম ভেঙে সাধারণ বাজারে বিক্রি করে দিতেন চাল।

করোনাভাইরাসের সময়ে চালু হওয়া বিশেষ ওএমএস ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে দুইদিন চলার পরই সামাজিক দূরত্ব না মানায় বন্ধ করে দিতে হয়। নিয়মিত ওএমএসের বিরুদ্ধেও রয়েছে একই অভিযোগ। এখন সরকার বিশেষ ওএমএসের জন্যও তালিকা করছে। করোনা সংক্রমণের এই সময়ে এটি নিয়মিত ওএমএসের মতোই বিতরণ করা হবে।

এর মাঝে ওএমএসের চাল উপকারভোগীদের না দিয়ে বিক্রি করে দেয়ার অনেকগুলো অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব অভিযোগের তদন্তও চলছে।

ওএমএসের মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য চাল কেজিপ্রতি ১০টাকায় পাওয়া যায়। সাধারণ বাজারে এর মূল্য চারগুনেরও বেশি।

সমাধানে ডিজিটাল-উদ্যোগ

টাঙ্গাইলের কালিহাতি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা চাল ক্রেতাদের চিহ্নিত করার জন্য কিউআর কোড সম্বলিত ডিজিটাল কার্ড তৈরির উদ্যোগ গ্রহণ করেন। এজন্য প্রকৃত উপকারভোগীদের তালিকা তৈরি করে কিউআর কোডসহ ডিজিটাল কার্ড দিয়ে দেন। যে কারণে উপজেলাটিতে এখন শুধুমাত্র হতদরিদ্ররাই কমমূল্যে ১০ টাকা দরে চাল কিনতে পারছেন। আর এই পুরো প্রক্রিয়া যে অ্যাপকে কেন্দ্র করে চলছে, সেটি তৈরি করে দিয়েছে কিশোর আল আমিন।

যেভাবে কাজ করছে আল আমিনের অ্যাপ

১৮ বছরের কিশোর আল আমিনের তৈরি অ্যাপের মাধ্যমে ১০ টাকা দরের ওএমএস চাল বিক্রির প্রক্রিয়াটি তদারকি করছে উপজেলা প্রশাসন। প্রতিদিন চাল বিক্রির যাবতীয় তথ্য জমা হচ্ছে উপজেলা প্রশাসনের অনলাইন সিস্টেমে।

চাল বিতরণ: কালিহাতীকে ‘বদলে দিল’ কিশোর

অ্যাপটির কর্মপদ্ধতি নিয়ে আল আমিন হ্যালোকে জানায়, তালিকায় যাদের নাম আছে তাদের হাতে কিউআর কোড সম্বলিত একটি ডিজিটাল কার্ড দেয়া হয়েছে৷ উপকারভোগীরা ওই কার্ড নিয়ে ডিলারের নিকট এলে মোবাইলের নির্দিষ্ট অ্যাপে কিউআর কোড স্ক্যান করে চাল দেয়া হচ্ছে। এতে একই ব্যক্তি একাধিকবার বা নির্ধারিত পরিমাণের বেশি চাল নেয়ার সুযোগ পাচ্ছেন না। অন্যদিকে খুব সহজে স্বল্প সময়ে তালিকাভুক্তদের হাতে চাল পৌঁছে যাচ্ছে। আবার মাস্টাররোলে টিপসই বা সই দিতে না হওয়ায় সামাজিক দূরত্বও নিশ্চিত হচ্ছে।

কালিহাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শামীম আরা নিপা হ্যালোকে বলেন, “প্রযুক্তির সুবিধা কাজে লাগিয়ে চাল বিতরণের চিন্তা করেছিলাম। তখন আমাদের হাতে সময় খুব কম। প্রশাসনিকভাবে বড় সফটওয়্যার কোম্পানির কাছে যেতে পারছিলাম না। স্থানীয়ভাবে আল আমিনকে বলা হয়। সে খুবই কম সময়ে একটি অ্যাপ তৈরি করে দেয়। প্রথমে আমরা কালিহাতি উপজেলায় এটি শুরু করি। এখন জেলা প্রশাসক এটাকে আপগ্রেড করে সারা জেলায় ব্যবহারের জন্য কাজ করছেন।”

কী বলছেন উপকারভোগী ও ডিলাররা?

সেবাগ্রহীতা জগদীশ চন্দ্র দেব নাথ বলেন, “আগে চাল নিতে অনেক দেরি হইত। এখন খুব তাড়াতাড়ি পেয়ে যাই। কার্ড স্ক্যান করার পরেই চাল দিয়ে দেয়।”

উপজেলা সদরের কুলিন এন্টারপ্রাইজ স্বত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম রনি বলেন, “ডিজিটাল কার্ড থাকায় চাল বিতরণ সহজ হয়েছে। তাছাড়া সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করে আমরা এখন চাল দেই যা আগে সম্ভব ছিল না।”

এর আগেও আল আমিন আরও বেশ কয়েকটি অ্যাপ তৈরি করেছিলেন।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com