সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা যায়, সান্ধ্যকালীন এ স্কুলে সমাজের ছিন্নমূল এবং সুবিধাবঞ্চিত শিশুরা পাচ্ছে শিক্ষার সুযোগ।
জানা যায়, কলেজ কর্তৃপক্ষের সার্বিক তত্ত্বাবধানে বিনা বেতনে শিশু থেকে অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত শিক্ষার সুযোগ পাচ্ছে এসব শিশুরা। ১৭ জন শিক্ষকের সার্বিক তত্ত্বাবধানে পরিচালিত হচ্ছে এ শিক্ষা কার্যক্রম। বর্তমানে এ স্কুলের মোট শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৪৩৫ জন।
প্রেস, হোটেল, কমলাপুর স্টেশন কিংবা বাসায় কাজের পাশাপাশি এসব শিশুরা লেখাপড়া করে বলে জানায় তারা।
এই স্কুলে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ার পাশাপাশি হোটেলে কাজ করে রাসেল মিয়া। সে হ্যালোকে বলে, “হোটেলে নয় ঘণ্টা কাজ করার পর ৬টা বাজে স্কুলে আসি। আমি বড় হয়ে ইঞ্জিনিয়ার হতে চাই।”
গৃহকর্মীর কাজ করে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র মো. ইউসুফ। বাসার কাজের ফাঁকে এই স্কুলে পড়ছে বলে জানায় সে।
আরামবাগ থেকে আসে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থী ঢেউ (৭)। সে বলে, “এখানে আমার পড়তে ভালো লাগে। এখানে পড়াশোনা করি, খেলতে পারি।”
চতুর্থ শ্রেণির শিক্ষার্থী সুমন (৮) বলে, “এখানে আমার অনেক বন্ধু আছে। আমি এদের সাথে খেলি, একসাথে পড়ি। আমাদের স্যাররা প্রচুর ভালো পড়ায়, আমরাও পড়ি।”
আর্থিক অনটনে শিশুদের স্কুলে ভর্তি করাতে না পারলেও এখানে বিনা বেতনে পড়াতে পেরে সন্তুষ্ট অভিভাবকরাও।
আরামবাগের বাসিন্দা পারভীন আকতার। এই স্কুলে তার ছেলে ফাহিম হোসেন শিশু শ্রেণিতে ও মেয়ে লামিয়া আক্তার পড়ে প্রথম শ্রেণিতে।
তিনি বলেন, “অন্যান্য স্কুলে টাকা পয়সা লাগে এই জন্য পড়াইতে পারি না। এইখানে লেখাপড়াও ভালো, টাকা পয়সাও লাগে না।”
দক্ষিণ কমলাপুর থেকে আসা লায়লা খাতুন বলেন, “আমার ছেলে পড়ে ওয়ানে। আমার বোনেরাও পড়ত এখানে।”
অষ্টম শ্রেণিতে পড়া মিমের মা নূরবানু বেগম বলেন, “এই স্কুল যদি ম্যাট্রিক পর্যন্ত হয় তাহলে আমাদের জন্য ভালো হয়।”
নটরডেম লিটার্যাসি স্কুলের প্রধান শিক্ষক জেবিআর গোমেজ বলেন, “এখানে যারা পড়ে তাদের ৮০ ভাগই কোনো না কাজ করে আর ২০ ভাগ আছে যারা সময়মত পড়তে পারে নাই।
“আমাদের এখানে মা সন্তান একসাথেও পড়েন। আমাদের স্কুল থেকে পিইসি এবং জিএসসি পাসের হার ৯৯% থেকে ১০০%।”
কলেজের সার্বিক তত্ত্বাবধান ও সহযোগিতায় পরিচালিত এ কার্যক্রমকে আরো সম্প্রসারিত করার পরিকল্পনা নিয়ে নটরডেম কলেজের অধ্যক্ষ ড. ফাদার হেমন্ত ফিউস রোজারিও বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা আছে স্কুলটাকে আরেকটু উন্নত করার। বাহির থেকে আরো কিছু শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হবে। যাতে করে শুধু পথশিশু নয়, মধ্যবিত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েরাও পড়তে পারে।”
সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত পরিচালিত হয় এ শিক্ষা কার্যক্রম।