বগুড়ায় বাল্যবিয়ের ফলে ভুগছেন শিশু ও নারী

বগুড়ায় বাল্যবিয়ের শিকার হয়ে পরিণতিতে তালাক পেয়ে কষ্টে ভুগছেন নারী ও শিশু।
বগুড়ায় বাল্যবিয়ের ফলে ভুগছেন শিশু ও নারী

জেলার  শেরপুর উপজেলার বেলঘরিয়া গ্রামের বাবুলি আক্তারের সাথে সম্প্রতি কথা হয় হ্যালোর।

তিনি জানান, ১৬ বছরে বিয়ে হয়েছিল। শ্বশুর বাড়ি ও স্বামীর অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে বাবুলি এখন বাবার বাড়িতে।

তিনি আরও জানান, নিজের ইচ্ছাকে বির্সজন দিয়ে বাবা-মায়ের ইচ্ছার মূল্য দিতে গিয়ে বিয়ে করে।

বাবুলি বলেন, ‘স্বপ্ন ছিলো শিক্ষক হওয়ার। আমার আবার পড়তে মন চায় কিন্তু চক্ষুলজ্জায় স্কুলে যেতে পারি না।'

বাবুলির মা দিপালি বেগম (৩৮) দু:খ করে  বলেন, 'পাত্র ভালো পাইয়া বিয়া দিয়া দিছিলাম। কিন্তু এমন দিন দেখতে হবে তা জানতাম না!' 

লিপি খাতুনের বিয়ে হয়েছিল ১৪ বছর বয়সে। ১৫ বছরেই মা হন। মেয়ের নাম রাখেন ফাতেমা। এত অল্প বয়সে মা হওয়ায় সময়ের আগেই জন্ম নেওয়া ফাতেমা নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়।

'ওই দিনের কথা মনে হইলে এখনও খারাপ লাগে। কী অবস্থার মধ্যে ছিলাম আমিই জানি।’

সে আরো বলে, 'শ্বশুরবাড়ির চাপের মুখে বাচ্চা নিতে হইছিল।'  

লিপির মা লাইলি (৪০), হ্যালোকে বলেন, 'গরিব মানুষ হামরা। কত দিনই বিটিক ঘরে রাখমু? তাই বিয়া দিয়া  দিয়ে দিছুনু।’   

প্রতিবেশি আব্দুল কুদ্দুস হ্যালোকে বলেন, 'কম বয়সে বিয়ে দেওয়া ভালো না, জানি বাবা। তবে, গরিব মানুষ কত দিনই বাপ-মায়ে খাওয়াবার পারবে?' 

বাল্যবিয়ে তথা শিশু বিয়ে দেশের জন্য হুমকি এটা জানলেও এসএসসিতে জিপিএ পাঁচ পাওয়া ঋতু পর্ণার বিয়ে হয়ে যায় পরীক্ষা পাস করার পরেই।

শ্বশুরবাড়ির লোকেরা বিয়ের পরে তাকে পড়ার সুযোগ দেবে বলে বিয়ে হয়েছিল। বিয়ের পরে তারা সে কথা রাখেননি, দু:খ করে জানায় ঋতু।

ঋতুর বন্ধু মনোয়ারা বলে, 'এক সঙ্গে পড়তাম দুজনে। বিয়ের পর মাঝে মাঝে কথা হয় ওর সাথে। ফোনে ওর অনেক কষ্টের কথা বলে ও। ওর মতো মেধাবী বন্ধুকে হারিয়ে আমি হতাশ।'

বিষয়টি নিয়ে বগুড়া জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকতা শহিদুল ইসলাম হ্যালোকে বলেন, 'বাল্যবিয়ে প্রতিরোধে ব্যাপারে আমরা খুবই শক্ত অবস্থানে আছি।

‘কিন্তু যাদের বিয়ে হয়ে গেছে এবং এদের মধ্যে যারা নির্যাতনের শিকার তাদের জন্য পুনর্বাসনের জন্য প্রশাসন ট্রেনিং সেন্টার খুলে দিয়েছে।’  ট্রেনিং সেন্টারে এরকম নির্যাতিত বা তালাপ্রাপ্তরা ট্রেনিং নিয়ে ভবিষ্যতে নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারে বলে জানান তিনি।

তিনি বলেন, 'বাল্যবিয়ে রুখতে প্রত্যেক উপজেলায় সভা-সমাবেশ করে থাকি। পাশাপাশি নারী ও শিশু নির্যাতন প্রতিরোধে ন্যাশনাল টোল ফ্রি হেল্পলাইন-১০৯-র মাধ্যমে অভিযোগ গ্রহণের পাশাপাশি ব্যবস্থাও গ্রহণ করা হয়ে থাকে।'    

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com