রোহিঙ্গাদের জন্য সালমান রুশদি

নিপীড়নের মুখে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের পক্ষে বিবৃতি দিয়েছেন ‘স্যাটার্নিক ভার্সেস’ উপন্যাসের লেখক সালমান রুশদিসহ বেশ কয়েকজন বুদ্ধিজীবী।
রোহিঙ্গাদের জন্য সালমান রুশদি

সম্প্রতি বিবৃতিটি যুক্তরাজ্যের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকায় প্রকাশ হয়।  

এতে বলা হয়, গত দুই মাসে ছয় লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা দেশ ছাড়া হয়েছেন, তাদের বাড়িঘর ধ্বংস করা হয়েছে, নির্যাতন করা হয়েছে।

নিরাপত্তার খোঁজে পালাতে গিয়েও রোহিঙ্গা নারীদের অনেকেই ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। মনে করুন তো রুয়ান্ডায় কী হয়েছিল?

বরং মায়ানমারের দিকেই নজর দিন।  

বর্তমান পৃথিবীতে সবচেয়ে বঞ্চিত জনগোষ্ঠী হিসেবে ধরা হয় রোহিঙ্গাদের। তারা প্রধানত মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ জাতিগোষ্ঠী হিসেবে পরিচিত।

মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দীর্ঘকাল যাবত বাস করলেও তাদেরকে সেখানকার নাগরিকত্ব দেওয়া হয়নি। বছরের পর বছর ধরে তাদের চলাফেরার ক্ষেত্রে দেওয়া হয়েছে নানা ধরনের বিধিনিষেধ। তাদেরকে শিক্ষা, চিকিৎসা ও অন্যান্য প্রাথমিক মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত রাখা হয়েছে।   

সন্ত্রাসবাদ ও বিচ্ছিন্নতাবাদের ধোঁয়া তুলে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর ওপর চালানো হয়েছে নির্মম অত্যাচার। যাকে জাতিসংঘ ‘পাঠ্যপুস্তকে ঠাঁই’ দেওয়ার মতো জাতিগত নির্মূল অভিযান বলছে।

এ বছরের ২৫ অগাস্ট রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের মোট জনগোষ্ঠীর প্রায় অর্ধেককে তাড়িয়ে দিয়েছে মায়ানমার সরকার। অল্প কয়েকদিনের মধ্যে এই বিপুল সংখ্যক মানুষকে ভিটেমাটি থেকে উচ্ছেদের ঘটনা গত কয়েক দশকের মধ্যে আর দেখা যায়নি।    

জনসংখ্যাধিক্য, দারিদ্র ও জলবায়ু সংক্রান্ত নানা সঙ্কটের মোকাবিলার মাঝেও উদ্বাস্তু রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে বাংলাদেশ। দেশটির পক্ষে তাদের জন্য যতোটুকু করা সম্ভব, তাই করছে।

আর রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক মহলে যেরকম নিন্দার ঝড় ওঠার কথা ছিলো, বাস্তবে হয়েছে ঢের কম।

জাতিসংঘের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাদের সাহায্যার্থে যে তহবিলের আবেদন জানানো হয়েছিলো, তা পূরণে রয়েছে বিপুল ঘাটতি । রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে মিয়ানমার সরকারের ওপর খুব একটা রাজনৈতিক চাপ প্রয়োগ করেননি বিশ্ব নেতারাও।   

মিয়ানমার এখন আর কোনও  নিষিদ্ধ রাষ্ট্র নয়। সেখানে এখন গণতান্ত্রিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকার ক্ষমতায় । আর শেষ কয়েক বছরে দেশটিতে প্রচুর সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ হয়েছে।

এই অঞ্চলে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অবশ্যই এই নির্যাতনের বিরুদ্ধে কথা বলতে হবে। মানবাধিকার লঙ্ঘন এভাবে চালু থাকলে প্রয়োজনে বিনিয়োগ সরিয়ে নিতে হবে। নতুবা বিনিয়োগকারিরাও জাতিগত নিধনের এ ভয়ঙ্কর ঘটনার দায় বহন করবেন।

শুক্রবার বিশ্ব নেতারা আসিয়ান শীর্ষ সম্মেলনে মিলিত হতে যাচ্ছেন। কিন্তু তাদের আলোচনার এজেন্ডাগুলোর কোথাও রোহিঙ্গাদের নির্যাতন ও বিতরণের বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি।   

নেতাদের কাছে আমাদের আহ্বান- নৃশংসতা বন্ধ, রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব এবং তাদেরকে নিজেদের বাড়িঘরে ফিরে যাওয়ার অনুমোদন দেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের প্রতি যাতে তারা চাপ প্রয়োগ করেন।  

আরও আহ্বান জানাচ্ছি যেন তারা অবশ্যই জাতিসংঘের প্রস্তাবিত সাহায্য তহবিলে অংশ নিয়ে ঘাটতি পূরণ করেন- যে ঘাটতির কারণে সন্ত্রস্ত শিশুদের খাদ্য, চিকিৎসা ও নিরাপদ আশ্রয় থেকে বঞ্চিত করছে। 

সবশেষে জাতিসংঘের সদস্য দেশগুলোর অবশ্যই রোহিঙ্গা সঙ্কট মোকাবিলা করে এ জাতিকে রক্ষার জন্য নিজেদের জায়গা থেকে কী কী কূটনৈতিক পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে তা বিশ্লেষণ করতে হবে।

আমরা এ গণহত্যা চেয়ে চেয়ে দেখতে পারি না। মানুষ হত্যা ও পুড়িয়ে দেওয়াকে আমরা এই সময়ে কোনওভাবেই চলতে দিতে পারি না।

প্রত্যেক নৃশংসতার পরই আমরা বলি- ‘আর নয়।‘ কিন্তু আমাদের এটাকে সত্যিকার অর্থেই বাস্তবায়ন করতে হবে।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com