কষ্ট নিয়েই কথাগুলো বলছিলেন দিনমুজুর দুলাল হোসেন। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার কুশারীগাঁও গ্রামে।
সকাল সকাল ছয় কিলোমিটার পথ সাইকেল চালিয়ে এসেছেন পীরগঞ্জ পৌরশহরের পশ্চিম চৌরাস্তায়। উদ্দেশ্য শ্রম বেচে টাকা উপার্জন। দুলালের মতো আরো অনেকেই আসেন এখানে। শ্রমবিক্রির হাট বসে সকাল সকাল। ৪ থেকে ১২ জন করে শ্রমিকের এক একটি দলে রযেছে। তাদের আবার একজন দল নেতা রয়েছেন। যিনি কাজের বিনিময়ে টাকার দর কষাকষি করেন।
বুধবার সকাল সাড়ে ৫টার দিকে পীরগঞ্জ পশ্চিম চৌরাস্তায় গিয়ে এমনই দৃশ্য চোখে পড়ে। এসময় বেশ কয়েকজন দিনমজুরের সাথে কথা হয় হ্যালোর।
দুলাল জানান, কিছুদিন আগেও ধান কাটার জন্য শ্রমিকের চাহিদা খুব ছিল। এখন ধান কাটা প্রায়ই শেষদিকে। তাই অনেক শ্রমিক এখন বসে আছে, কাজ পাচ্ছে না।
প্রতিদিন নিজের শ্রম বিক্রির টাকাতেই সংসারের চাহিদা পূরণ হয় বলে জানালেন নিয়ামতপুর গ্রাম থেকে আসা দিনমজুর রফিকুল।
তিনি বলেন, “কাজ করলে টাকা পাই, কাজ না করলে টাকা নাই। সূর্য উঠার সাথে সাথেই পীরগঞ্জ শহরে চলে আসি কাজের সন্ধানে। কাজ না পাইলে কষ্ট করেই দিনটা পার করতে হয়।”
ঈদের কথা মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, “দিনমজুরের আবার কিসের ঈদ। কাজ করে যে টাকা পাই সেই টাকায় সংসারের খরচ চলে। তবে নতুন জামা কাপড় না কিনলেও সেমাই, চিনির জন্য টাকা জমায়ে রাখছি।”
প্রায় একই রকম কষ্টের কথা শুনিয়ে চণ্ডিপুর গ্রামের আইজুল বলেন, “ছোটবেলা ঈদের আগে আমিও আব্বার কাছে বায়না ধরতাম নয়া কাপড় কিনার জন্য। তখন আব্বা বাজার থেকে জামা কিনে আনতেন কিন্তু প্যান্ট না কিনে দেওয়ায় কান্নাকাটি করতাম। এখন নিজে আমি একজন বাবা। সন্তানের চাহিদা পূরণ করার ইচ্ছে থাকলেও টাকার জন্য পারি না।’
দিনমজুরের পরিবারে সারা বছর অভাব লেগে থাকে, এই কথা বলেছিলেন সূর্যপুর গ্রামের রহমান আলী।
তিনি বলেন, “দিনে কাজ করে যে টাকা পাই সেই টাকায় বিকালে হাটে বাজার-খরচ করে সন্ধ্যার ও সকালের খাবারের জন্য চাউল আর তরকারি কিনি। হাতে আর কিছুই থাকে না।”
শ্রমের বিনিময়ে টাকা দিতেও সমাজের বিত্তবানরা দর কষাকষি করেন এমনটিই বলছিল রিয়াজুল নামে আরেক দিনমজুর।
তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, “সবকিছুর দাম বাড়ছে। কাজ করতে গেলেও ন্যায্য মজুরি থেকে আমাদের কম টাকা দেয় অনেকে। প্রতিবাদ করলে পরবর্তীতে আর কাজে নেয় না। এজন্যই চুপ করে থেকে যা দেয়, তাই নিতে হয়।”
তিনি আরও বলেন, “কিছু কিছু মানুষ আছে যারা কাজ করিয়ে নেওয়ার পরেও সময়মতো টাকা দেয় না। ওরা বোঝার চেষ্টা করে না তারা টাকা দিলেই আমরা বাজার করি, খাই। টাকা না থাকলে কোনো কোনো সন্ধ্যায় আমাদের পানি খেয়েই ঘুমোতে যেতে হয়।”