হিজড়া শিশুরা কষ্টে আছে

শক্তি আছে, আছে সদিচ্ছাও। তবু স্বাভাবিক শিশুদের মতো জীবন নয় হিজড়া শিশুদের।
হিজড়া শিশুরা কষ্টে আছে

মাগুরার হিজড়া শিশুদের খাবারের জন্য হাত পাততে হয় অন্যের কাছে। উৎসবে নাচ গান করে বেঁচে থাকার লড়াইটা চালিয়ে যেতে হচ্ছে এসব শিশুর।

প্রাকৃতিক ভাবে শারীরিক ত্রুটির শিকার এই শিশুদের অনেকেই পরিবার ও সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন। এখনও নবজাতকের বাড়ি কিংবা রাস্তাঘাটে নাচ গান করে বা ভিক্ষে করে ভাত জোটায় এরা।

সমাজের সব সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বেশি ভাগ হিজড়া শিশু। তাদেরও লেখাপড়া, খেলাধূলা এবং স্বাভাবিক জীবন-যাপন করতে চায়। কিন্ত এ সব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তারা।

মিতা নামে একটি হিজড়া শিশু হ্যালোকে জানায়, ডাক্তারের কাছে চিকিৎসা করে স্বাভাবিক জীবনে ফেরার সামর্থ্য নাই তার।

ও বলে, ‘আমি পঞ্চম শ্রেণি পযর্ন্ত লেখাপড়া করেছি। শিক্ষক ও বন্ধুরা আমাকে ভালো চোখে দেখে না বলে আমি লেখাপড়া ছেড়ে দিয়েছি।

‘ইচ্ছা ছিল বড় ডাক্তার হব, কিন্ত হলো না।’

আরেক শিশু রুপসী বলে, ‘হিজড়া হওয়ায় গাড়িতে মানুষ আমার পাশে বসে না। আমি বসলে তারা উঠে যায়। আমরা একটা ভাল বাসা ভাড়া নিতে পারি না। কিন্তু আমরাও তো মানুষ!’

সখী নামে অপর শিশু বলে, ‘ইচ্ছা করে বাবা-মার সাথে থাকতে, স্কুলে যেতে, কিন্ত পারি না। আমার বাবা-মা আমাকে রাখতে চায় কিন্তু সমাজের মানুষের কথার ভয়ে তারা আমাকে তাদের কাছে রাখে না। আমার মনে খুব কষ্ট।’  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিশু জানায়, তাদের গুরুমা তাদের দিয়ে যে সব খারাপ কাজ করায় তা মুখে বলা যায় না। সে লেখাপড়া করতে চায়। কিন্তু লেখাপড়া কথা বললে মারধর করেন আর গালাগালি করেন। কথা মেনে না চললে আশ্রয় থেকে তাড়িয়ে দেবে বলে ভয় দেখায়।

এ বিষয়ে গুরুমা পাপিয়ার সাথে কথা হয় হ্যালোর। 

তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘আমার কাছে অনেক হিজড়া শিশু বড় হয়েছে। এখনও ১০ জন আছে। তাদের আমি পড়ালেখা করতে বলি। কারণ আমি নিজের নামও লিখতে জানি না। আমার মা-বাবা আমাকে পড়ায় নাই। তাই আমি জানি, পড়তে লিখতে না জানলে কত কষ্ট।’

হিজড়া শিশুদের দিয়ে কি কাজ করান প্রশ্ন করলে, পাপিয়া কোন জবাব দেননি।

সামাজিক অধিকার ও শিক্ষাসহ তাদের চাকুরির ব্যবস্থা হলে সমাজে তারাও অবদান রাখতে পারবেন বলে মনে করেন সরকারি বীরশ্রেষ্ঠ আব্দুর রউফ কলেজের অধ্যক্ষ কামাল হোসেন।

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষাবঞ্চিত হিজড়া শিশুদের প্রশিক্ষণ দিলে হয়ত তারা সামাজিক সুবিধাগুলো গ্রহণ করতে পারবে। কিন্তু রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি মিললেও হিজড়াদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তন না হলে তাদেরকে সমাজের মূলধারায় নিয়ে আসার সময়টা আরো দীর্ঘায়িত হবে।’

মাগুরা জেলার সমাজসেবা কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন হ্যালোকে বলেন, ‘মাগুরায একজন হিজড়া শিশুর নাম তালিকায় আছে। সে এখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। ও সরকারি হিজড়াশিক্ষা উপবৃত্তি পায়। অনেক হিজড়া শিশু রয়েছে যারা তালিকাভুক্ত হয় না। কারণ তাদেন গুরুমা তালিকাভুক্ত হতে দেন না। 

‘৫০ বছর বয়সের বেশি কারো নাম তালিকায় নেই। মাগুরা সদরে সতিজাতপুরে ছয়জন হিজড়া আছেন।’

হিজড়া শিশুদের লেখাপড়ার ব্যবস্থা করা হবে বলে জাহিদ হোসেন আশ্বাস দেন।

বাংলাদেশ সমাজসেবা অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০১২ সালে প্রথম বারের মত হিজড়া শিশুদের শিক্ষা উপবৃত্তি ও প্রশিক্ষণ-এর ওপর পাইলট প্রকল্প শুরু করা হয়। বেসরকারি সংস্থাগুলোর কাছেও ১৫ হাজার হিজড়ার তালিকা আছে। তবে আসল সংখ্যা আরও বেশি হবে, কারণ অনেক হিজড়া তাদের পরিচয় গোপন করায় গণনা করা সম্ভব হয়নি।   

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com