শেখানো হচ্ছে না ভিন্নধর্মের বন্ধুর সঙ্গে আচরণ

বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বী কয়েক জন শিশু বলেছে তারা অনেক সময় কোনো কোনো মুসলমান বন্ধুর আচরণে কষ্ট পায়।

বিদ্যালয়ে বন্ধুদের কাছে নিজের ধর্মের কটূক্তি শুনতে শুনতে অভ্যস্ত তন্ময় বড়ুয়া হ্যালোকে জানায়, ধর্ম নিয়ে নানা প্রশ্নে স্কুলে প্রায়ই ওকে বিব্রত হতে হয়।

রাজধানীর একটি ইংরেজি মাধ্যম বিদ্যালয়ের চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ে ও। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী এই শিশু বলে, “স্কুলে সবাই আমাকে বৌদ্ধ বৌদ্ধ বলে ক্ষেপায়। বলে আমরা নাকি নোংরা।”

অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী রাজশ্রী বড়ুয়া এ নিয়ে কথা বলার সময় বেশ ক্ষোভ প্রকাশ করে। তারা নানা বৈষম্যের শিকার বলে অভিযোগ করে ও।

“অনেক বন্ধু বলে, মুসলমান হয়ে যা,” বলে ও।

এসব বিদ্রুপের প্রতিবাদ করার ভাষা থাকে না উল্লেখ করে জানায় অনেক বন্ধু তাদের নিয়ে বিদ্রূপ করে, খোঁচা দিয়ে কথা বলে।

রাজশ্রী আরও জানায় তার স্কুলে বৌদ্ধ ধর্ম পড়ানোর জন্য কোনো শিক্ষক নেই। হিন্দু ধর্মাবলম্বী একজন শিক্ষক তাদের ক্লাস নেন। তিনি প্রায়ই বলেন বৌদ্ধ ধর্ম নাকি হিন্দু ধর্ম থেকে এসেছে। হিন্দুদের নবম অবতার নাকি বৌদ্ধ।

ধর্ম নিয়ে বন্ধুরা বিদ্রূপ করে জানিয়ে প্রত্যয় বড়ুয়া নামের আরেক শিশু বলে, “ওরা বিদ্রুপের সুরে বলে বৌদ্ধ তো মানুষ ছিল, মানুষ তো আর সৃষ্টিকর্তা নয়। তাহলে সৃষ্টিকর্তা কাকে মানিস?”

এবারের জেএসসি পরীক্ষার্থী প্রত্যয় বলে, বৌদ্ধ ধর্মের পরীক্ষা দিতে হয়। কিন্তু স্কুলে বৌদ্ধ ধর্মের ক্লাস করানো হয় না।

ও বলে, “এখানে নিজেকে অধিকার বঞ্চিত মনে হয়।”

ঢাকা আন্তর্জাতিক বৌদ্ধ বিহারের সদস্য ও চারুদেশ ট্যুরিজমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক উত্তম কুমার বড়ুয়া বলেন, “এগুলো দৃষ্টি ভঙ্গির ব্যাপার। গ্রামে গিয়ে দেখ ওরা আরো বেশি বৈষম্যের শিকার হচ্ছে।”

তবে বর্তমানে বেশ আতঙ্কে থাকেন উল্লেখ করে তিনি বলেন, “দেখছই তো কী হচ্ছে। নিজেরা স্বাধীনভাবে চলাচলে ভয় পাই, বাচ্চাদের কোন সাহসে বাইরে পাঠাব?”

বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের শিশুদের মতোই হেয় হতে হয় খ্রিস্টান শিশুদেরও। তাদেরও নানা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।

গাজীপুর থেকে বারিধারার ডি মাজেন্ড গির্জায় আসা দশম শ্রেণির ছাত্র প্রান্ত বিশ্বাস বলে, তার বেশিরভাগ বন্ধু মুসলমান। অনেকেই নানান কথা বলে। যিশুকে নিয়ে যখন মন্তব্য করে তখন কষ্ট পায় ও।

ও বলে, “আমরা নাকি যিশুকে ভুল পরিচয়ে চিনেছি, শিরক করেছি।

“আমাদের চুপ করে থাকা ছাড়া উপায় নেই। নিজেকে অসহায় মনে হয়।”

এ বিষয়ে গির্জার ইনচার্জ বিজয় কোনো কথা বলতে রাজি হননি। নিরাপত্তার প্রশ্নে গির্জায় আসা শিশুদের মন্তব্য নিতেও তিনি বাধা দেন।

একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে চতুর্থ ও পঞ্চম শ্রেণির বৌদ্ধ ও হিন্দু ধর্মের ক্লাস নেন সাহানাজ পারভীন।

সবার উপরে মানুষ সত্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, “আমি শিশুদের সব সময় শেখাই মানুষকে মানুষ বলে সম্মান করো, ধর্মের বিচারে নয়।”

বন্ধুদের সঙ্গে শিশুদের এই ধরনের আচরণ ঠিক নয়। এ আচরণ শেখানোর দায়িত্ব বিদ্যালয়ের বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, “বাচ্চারা বাড়িতে কতক্ষণ থাকে? স্কুলেই তো থাকে। তাই এসব আচরণ শেখানোর দায়িত্ব শিক্ষকদের নিতে হবে।”

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com