ভিক্ষা নাকি ব্যবসা?

সরকারের ২০১০-২০১১ থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে এই ভিক্ষাবৃত্তি নিরসনের জন্য। কিন্তু ভিক্ষুক কি কমেছে?
ফাইল ছবি

ফাইল ছবি

ছবি: বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম

ভাষায় তার বরিশাল অঞ্চলের টান। বাড়ির ঠিকানা জানতে চাইলে মুলাদি ছাড়া আর কিছু জানাতে পারলেন না। বয়স ২৫ কিংবা ২৬ হবে। এর বেশি নয়। নাম বললেন, ফিরোজা।

ফিরোজার সঙ্গে কথা হচ্ছিল রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকার একটি ফুটওভার ব্রিজের উপর। চার বছরের শিশুকে নিয়ে ভিক্ষা করছিলেন তিনি। জানালেন শুধু কোলের শিশুর জন্যই তাকে ভিক্ষা করতে হয়।

ধানমণ্ডি ২৭ নম্বর সড়কে ভিক্ষা করার সময় সুরমা বেগম নামের এক নারীর সঙ্গে কথা হয়। পড়ন্ত বিকেলে তিনি যখন বেঙ্গল বুকসের সামনে ভিক্ষা করছিলেন তখন দেড় বছর বয়সী দুধের শিশুটি তার কাঁধে চুপচাপ ঘুমাচ্ছিল।  প্রায় ৩০ বছর বয়সী এই নারীর দাবি সামান্য ঝগড়া থেকে স্বামী তাকে তালাক দেয়। কোনো উপায় না পেয়ে বগুড়া থেকে ঢাকায় পাড়ি জমিয়েছেন তিনি। এখন ধানমণ্ডি এলাকায় ভিক্ষা করাই তার পেশা।

বনানী ফুটওভার ব্রিজের নিচে চার শিশু সন্তানকে নিয়ে ভিক্ষা করার সময় হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা হয় আরেকজনের সঙ্গে।

নানা প্রশ্নের পরও কোনো কথারই উত্তর দিচ্ছিলেন না তিনি। তার আচরণ দেখে খানিকটা মানসিক বিকার গ্রস্তই মনে হলো। তার সন্তানরাও এমন সব অঙ্গভঙ্গি করে দেখে মনেহয় তারাও যেন মানসিক প্রতিবন্ধী। এই নারী যখন ভিক্ষা করছিলেন তখন তার কোলে ছিল এক দুধের শিশু।

ময়মনসিহের ধোবাউরা থেকে জীবিকার সন্ধানে ঢাকায় এসেছেন রহিমা নামের এক নারী। স্বামী দ্বিতীয় বিয়ে করায় সংসার ভাঙে তার । তারও রয়েছে দুই ছোট শিশু। ধানমণ্ডিতে তার সঙ্গে কথা হয় হ্যালোর। কাজ করার সামর্থ্য থাকার পরও কেন ভিক্ষা করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “ছুড আবুরে রাইখ্যা কামে যাওন যায়না। হের লাইগ্যা ভিক্ষা করি।”

রাজধানী ঢাকার প্রায় প্রতিটি এলাকায় এমন অসংখ্য নারী কিশোরীদের দেখা যায় ভিক্ষা করতে।  তাদের অধিকাংশের সঙ্গেই থাকে এক বা একাধিক শিশু।  তাদের গল্পগুলোও প্রায় একই রকম। সবগুলোই সত্যি ঘটনা নাকি এর পেছনে ভিন্ন গল্পও রয়েছে?

বিবিসির এক সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ঢাকা শহরে নানান ধরনের প্রায় ৪০ হাজার ভিক্ষুক রয়েছে।

বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ সরকারের ২০১০-২০১১ থেকে ২০২২-২০২৩ অর্থবছর পর্যন্ত ৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে এই ভিক্ষাবৃত্তি নিরসনের জন্য। কিন্তু ভিক্ষুক কি কমেছে? এই নারী ও শিশুরা শিকার হচ্ছে না তো কোনো অর্থলিপ্সু কুচক্রী মহলের?

নারীর স্বাধীনতা, সম্মান, সুরক্ষায় সরকারি - বেসরকারি উদ্যোগগুলো এই নারীদের রক্ষায় কতটুকু কাজে আসছে তা ভেবে দেখা জরুরী। সেই সঙ্গে দরকার সব নারী তথা সব মানুষকে ভিক্ষাবৃত্তির মতো অনুৎপাদনশীলখাত থেকে মুক্ত করা।

প্রতিবেদকের বয়স: ১৪। জেলা: ঢাকা।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com