‘বাধা আসবেই, ডিঙাতেও হবে’ (ভিডিওসহ)

"জাতীয় দল অব্দি আসতে এদেশের অন্য নারী ফুটবলারদের মতো স্বপ্নাকেও অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে, উপেক্ষা করতে হয়েছে সমাজ ও পরিবারের চোখ রাঙানিকে।"

সাফ চ্যাম্পিয়নশীপ জয়ী বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলের আক্রমণভাগে খেলেন রংপুরের মেয়ে সিরাত জাহান স্বপ্না।

জাতীয় দল অব্দি আসতে এদেশের অন্য নারী ফুটবলারদের মতো স্বপ্নাকেও অনেক সংগ্রাম করতে হয়েছে, উপেক্ষা করতে হয়েছে সমাজ ও পরিবারের চোখ রাঙানিকে।

রংপুরের ছোট্ট একটা গ্রাম থেকে উঠে এসে জাতীয় দলের একজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হয়ে ওঠার গল্প জানতে সম্প্রতি হ্যালো মুখোমুখি হয় স্বপ্নার।

হ্যালো: কেমন আছেন?

স্বপ্না: আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি।

হ্যালো: আপনার ছোট থেকেই কি স্বপ্ন ছিল ফুটবলার হবেন?

স্বপ্না: প্রথমে যখন ফুটবল খেলা শুরু করি তখন ভাবিনি যে ফুটবলার হব। আমি আগে জানতাম না বাংলাদেশে মেয়েরাও ফুটবল খেলে। ধীরে ধীরে বুঝলাম যে মেয়েরাও খেলে, বাইরের দেশে যায়। স্বপটা তখন থেকেই দেখি যখন শুনেছি যে মেয়েদের ন্যাশনাল টিম আছে, ওরাও বিদেশে খেলতে যায়।

হ্যালো: ফুটবলার হওয়ার ক্ষেত্রে আমাদের আজকের স্বপ্নাকে কী কী বাধা পেরোতে হয়েছে? পরিবার ও সমাজের ভূমিকা কী ছিল?

স্বপ্না: আমরা যখন প্রাইমারি লেভেল থেকে খেলা শুরু করি, এলাকার মানুষ তখন জানতে পারে যে মেয়েরা ফুটবল খেলে। অনেক মানুষের এটা মানতে কষ্ট হচ্ছিল যে এরকম অজপাড়া গাঁয়ের মেয়েরা ফুটবল খেলবে। তো তখন তারা বাধা দেয়, মেয়েরা কেন ফুটবল খেলবে তাও আবার হাফ প্যান্ট পরে এসব অভিযোগ করে। ফ্যামিলি থেকেও প্রথম প্রথম সাপোর্ট পাইনি। গ্রামের অনেকেই এসে মা কে বলতেন হাফ প্যান্ট পরে ফুটবল খেলার কথা। তো এরকম অনেকেই বাধা দিতেন। তবে অল্পকিছু সমস্যা ছাড়া বেশিরভাগ মানুষই সাপোর্ট করতেন। স্কুলের সভাপতি ও ম্যাডামরা অনেক সহযোগিতা করেছেন।

হ্যালো: যারা এক সময় বাধা দিয়েছেন তারা আজ অভিনন্দন জানাতে আসছেন৷ এমন কোনো ঘটনা মনে পড়ছে কিনা।

স্বপ্না: আমি খুব অবাক হয়েছি রংপুরে এসে। আমাদের এখান থেকে দুইশত লোক গেছে ট্রাকে, মোটরসাইকেল ও গাড়িতে করে। সেখানে অনেককেই দেখলাম যারা শুরুতে চাইতেন না আমি খেলি, বাধা দিতেন আমাকে তারাও ছিলেন। তো ঐদিন আর অনেক ভালো লেগেছে যে তারাও আমাকে আনতে গিয়েছিলেন।

হ্যালো: ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা কী? নিজেকে পাঁচ বছর পর কোথায় দেখতে চান?

স্বপ্না: প্রথমত আমরা সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি এটাকে ধরে রাখতে চাই। কারণ ভালো কিছু করলে সবাই আরও ভালো প্রত্যাশা করে। আমরা একবার সাফ চ্যাম্পিয়ন হয়েছি, শুধু এখানেই থেমে থাকতে চাই না। সামনের সাফেও আমরা সাফল্য ধরে রাখতে চাই এবং এশিয়ার বাইরে খেলতে চাই। তো পাঁচ বছর পর নিজেকে এর থেকে ভালো একটা জায়গায় দেখতে চাই।

হ্যালো: আজকের তারকা ফুটবলার স্বপ্নাকে কখনো বাল্যবিয়ের চাপের মুখে পড়তে হয়েছে? হলে কীভাবে সামলেছেন তখন?

স্বপ্না: আসলে বিয়ে দিতে চেয়েছিল এরকম কিছু না। তবে আমার বিয়ের জন্য প্রস্তাব এসেছিল। গ্রামে থাকলে তো প্রস্তাব আসে কিন্তু বিয়ে নিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়নি।

হ্যালো: ক্রিড়াপ্রেমী মেয়েদের পরিবারের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন। আজও অনেক মেয়েই পরিবারের বাধার সম্মুখীন।

স্বপ্না: যেসব মেয়েরা বাধার সম্মুখীন হচ্ছে, তাদেরকে শুধু এটুকুই বলতে চাই যে কোনো বাধাই বাধা না। আমরা মেয়েরা কোনোকিছুতেই পিছিয়ে নেই, আরও সামনে এগিয়ে যাব। বাধা আসবেই, সব বাধাকে পেছনে ফেলে এগিয়ে যেতে হবে।

হ্যালো: এই মেয়েদের ক্রীড়ায় আনতে সরকার কোন ধরনের পদক্ষেপ নিতে পারে বলে মনে করেন। 

স্বপ্না: আমরা সবাই জানি প্রধানমন্ত্রী ক্রীড়াপ্রেমী মানুষ। তিনি আমাদেরকে উৎসাহ দেন সব সময়। সব সময়ই আমাদের খোঁজখবর রাখেন। আমি প্রধানমন্ত্রীকে অনেক ধন্যবাদ জানাতে চাই কারণ তিনি আমাদের অজপাড়া গাঁয়ে একটি মিনি স্টেডিয়াম করে দিয়েছেন। এখান থেকে অনেক নারী ফুটবলার বেরিয়ে আসবে ভবিষ্যতে।

হ্যালো: অনেক ধন্যবাদ আপনাকে!

স্বপ্না: তোমাকেও ধন্যবাদ।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com