অনুরোধ আসলেও বাল্যবিয়ে করান না বলে দাবি করেছেন মো. আব্দুল মান্নান নামে সিলেটের এক কাজী। হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বাল্যবিয়ে নিয়ে তার অভিজ্ঞতা, মতামত ও পরামর্শ ভাগাভাগি করেছেন।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে করানোর কোনো অনুরোধ এলে কী করেন?
মো. আব্দুল মান্নান: বাল্যবিয়ে নিয়ে কথা আসলেই আমরা দূরে থাকি। আর অনুরোধ তো পালন করা দূরের কথা। যে সময় শুনি এটা বাল্যবিবাহ তখন থেকেই আমরা অনেক দূরে থাকি। যাতে বাল্যবিবাহটা না হয় সে অনুযায়ী আমরা কাজ করি৷
হ্যালো: বাল্যবিয়ে করানোর জন্য আপনাদের উপর কোনো চাপ আসে কি?
মো. আব্দুল মান্নান: বাল্যবিয়ে দেওয়ার জন্য কোনো চাপ দেয় না। তবে বয়স কমের ব্যাপারটা গোপন করে চায় যে বিয়েটা হয়ে যাক। তখন আমরা তার জন্মসনদ এনে দেখি যে বয়স হয়েছে কি না, যদি দেখা যায় বয়স হয়নি, তখন আমরা পরিবারকে জানাই যে বিয়ের বয়স হয়নি এখনো।তখন তারা চাপাচাপি করে। বলে যে, আমরা বিয়ের আয়োজন করে ফেলেছি। কোনো রকম বিয়েটা করিয়ে দেন। তখনও আমরা কোনো অবস্থাতেই এই বিয়েতে সম্মতি দেই না। তখন বিয়ে বন্ধ করার জন্য যতটুকু পরামর্শ দেওয়ার দরকার আমরা ততটুকু পরামর্শ দিয়ে আসি।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে নিয়ে আপনার পরামর্শ কী, বাল্যবিয়ে হওয়া উচিত কিনা?
মো. আব্দুল মান্নান: না না। বাল্যবিবাহ নিয়ে আমাদের পরামর্শ হলো, বাল্যবিবাহ কখনো সমর্থন যোগ্য নয়, শরিয়ত সম্মত নয় । আবার সরকারি আইন অনুযায়ী বাল্যবিবাহ সঠিক নয়। সুতরাং বাল্যবিবাহ করানোর প্রস্তাব এলে আমরা অভিভাবকে বোঝাই যে মেয়ের বয়স কমপক্ষে ১৮ বছর ও ছেলের বয়স ২১-২২বছর হতে হবে। এর নিচে হলে বিয়ে না দেওয়ার জন্য পরামর্শ দেই।
ওই সময়ে কথাবার্তার মাধ্যমে যতটুকু বোঝানো সম্ভব আমরা তা চেষ্টা করি।
বাল্যবিবাহের অনুরোধ পালন করা দূরে থাক, বাল্যবিবাহ সম্পর্কে সমাজ এবং দেশের মানুষকে সচেতন করতে আমাদের সাধ্যমত কাজ করি এবং আগেও করেছি।
হ্যালো: বাল্যবিয়ের জন্য অনেক সময় কাজীদেরকেও দায়ী করা হয়। বলা হয় বাল্যবিয়েতে গোপনে কাজীরা সহযোগিতা করে থাকেন। এই বিষয়ে আপনি কিছু বলতে চান?
মো. আব্দুল মান্নান: না, এই কথাটা আমার কাছে সঠিক মনে হয় না। যদি এই রকম কেউ করে থাকে তাহলে এই বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে কাজীরা কোনো সময় এরকম কাজ করে না। কেউ কি চায় নিজের বুকে নিজে ছুরি মারতে। বাল্যবিবাহে সহযোগিতা করা মানে, নিজের লাইসেন্সে দাগ পড়া। তাই কেউ কি চায় নিজের লাইসেন্সে দাগ পড়ুক?
বাল্যবিবাহে সহযোগিতা করা কোনো ভালো বিষয় নয়। ইউনিসেফ, ডিসি অফিস, উপজেলা প্রশাসন থেকে আমাদের কোর্স করানো হয়। এই কোর্সে বলা হয় কেন বাল্যবিবাহে সহযোগিতা করা যাবে না। বিয়ে পড়ানোর সময় জন্মসনদ দেখে ও জন্মসনদের ফটোকপি নিয়ে বিয়ে পড়াতে বলা হয় আমাদের। তাই বাল্যবিয়েতে কাজীরা সহযোগিতা করার কোনো প্রশ্নই আসে না।
হ্যালো: বাল্যবিয়ে বন্ধে কোন কোন পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি বলে আপনি মনে করেন?
মো. আব্দুল মান্নান: এটাতো অনেক লম্বা বিষয়। প্রথমে আমি বলব অভিভাবকদের সচেতনতার অভাব রয়েছে। দ্বিতীয়ত হলো গ্রামাঞ্চলের মানুষের কাছে বাল্যবিয়ের কুফলগুলো সেভাবে পৌঁছায় না। বাল্যবিবাহ বন্ধে সরকার বা বিভিন্ন সামাজিক সংস্থা যে উদ্যোগ গ্রহণ করে তা পত্র পত্রিকাতেই সীমাবদ্ধ বোঝা যায়। তবে মানুষকে আরো সচেতন হতে হবে। এই বিষয়টা যদি আরো ব্যাপকহারে প্রচার করা হয় তাহলে সবাই বাল্যবিবাহ থেকে দূরে থাকবে এবং সচেতন হবে।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৫। জেলা: সিলেট।