শুধু বাংলাদেশেই নয়, প্রতিবেশি দেশ ভারতেও শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে হরহামেশাই। এ নিয়ে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে কথা হয় হরষিত দেবনাথ নামের ভারতীয় এক কবি ও অবসরপ্রাপ্ত স্কুল শিক্ষকের সঙ্গে।
তার সঙ্গে আলাপচারিতায় উঠে আসে ওপাড় বাংলার শিশুশ্রম ও বাল্যবিয়ের নানা চিত্র।
হ্যালো : ভারতে শিশুশ্রমের প্রেক্ষাপটটা কেমন?
হরষিত দেবনাথ: শিশু শ্রমিকের ব্যাপারে সরকারি নির্দেশনা যথেষ্ট কড়াকড়ি আছে। কিন্তু বাস্তবে সেটা খুব একটা ফলপ্রসু দেখা যায় না। এর প্রধান কারণ অর্থনৈতিক সঙ্কট রয়েছে। অশিক্ষা রয়েছে, এছাড়াও মালিক শ্রেণি রয়েছে যারা চেষ্টা করে শিশুদের দিয়ে, নারীদের দিয়ে কম মজুরিতে কাজ করাতে। সেখানে অসংখ্য দেখা যায় ইটভাটায়, মেক্সিমাম শিশু শ্রমিক কাজ করে চায়ের দোকানে, হোটেলে, রেস্তোরাঁয়, সব জায়গায় অহরহ শিশু শ্রমিক দেখা যায়।
সরকারের চোখে ধুলো দিয়ে এগুলো হচ্ছে। যদি কেউ এর বিরুদ্ধে এলিগেশন করে তবে সরকার অবশ্যই তার ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু বাস্তবে তো সেটা হচ্ছে না। বাস্তবে যেটা হওয়ার সেটা হয়েই যাচ্ছে। আমাদের সামাজিক যে অনগ্রসরতা সেক্ষেত্রে সরকারের তো কিছু করার থাকে না। প্রশাসন সেখানে সব ব্যাপারে ঘুমন্ত থাকে। প্রশাসনকে তো চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখে না দিলে প্রশাসন সজাগ হয় না। যার ফলে এগুলো হয়ে যাচ্ছে অহরহ প্রচুর শিশু শ্রমিক।
যদিও শিশু শিক্ষার জন্য বাধ্যতামূলক ব্যবস্থা আছে। সেখানে পোশাক পরিচ্ছেদ দেওয়া হয়, বইপত্র তো ফ্রি আছেই তবে ইদানিং মিড মিল চালু হওয়ার ফলে শিশুশ্রম কিছুটা কমেছে।
সেই শিশুশ্রম ও শিশু শিক্ষার অগ্রগতি কিছুটা ঘটেছে। তবুও সেটা আশানুরূপ বলা যাবে না। বিশেষ করে অর্থনৈতিক যারা অনগ্রসর বাবা মা কাজে চলে যায় কিনা করছে খোঁজ খবর তাদের রাখা হয় না। কিছুটা মর্মান্তিক ঘটনা আরকি। নির্দেশনা গুলো কার্যকরী হয় না বাস্তবে।
হ্যালো: আচ্ছা বাল্যবিয়ের প্রেক্ষাপটটা একটু আমাদের জানাবেন?
হরষিত দেবনাথ: বাল্যবিয়ের ব্যাপারে খুব স্ট্রিক্টলি সরকারি ব্যবস্থা আছে। সেখানে এরকম ঘটনা ঘটছে এগুলো বেশিরভাগই অশিক্ষিত শ্রেণিতে দেখা যায়। নাইন-টেনে পড়তে পড়তেই হয়ত মেয়েদের বিয়ে হয়েছে এরকম ঘটনা দেখা যায়। কিন্তু সেটা লুকিয়ে চুরিয়ে হয়, আমি একটা ঘটনা দেখেছি ১৮ বছর বয়স হলে আশীর্বাদ করে রাখছে যে ১৮ বছর হলে, তাই বিয়ে দিবে। কিন্তু দুই এক সপ্তাহের মধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের বিয়ে হয়ে গেল, তখনো সে মেয়ের বয়স ১৮ বছর হয়নি। এরকম ঘটনা অনেকই ঘটে।
তবে রেজিস্ট্রেশনগুলো হয়নি এভাবে। রেজিস্ট্রেশন যেগুলো হয় সেগুলো উপযুক্ত বয়স না হলে হয় না। কিন্তু এমনও দেখা যায় আগে বিয়ে হয়ে যায় পরে বয়স হলে একটা রেজিস্ট্রেশন করে। রেজিস্ট্রেশন এখন ওখানে প্রায় বাধ্যতামূলক হয়ে গেছে। কিন্তু সেখানে আগের থেকে অনেকটাই কমেছে বাল্যবিয়ে। কিন্তু তাও লুকিয়ে চুরিয়ে হচ্ছে বাল্য বিয়ে এবং এটা প্রধানত গ্রাম অঞ্চলে এবং অশিক্ষিত শ্রেণিতে বেশি হয়।
হ্যালো: আপনি সমাজকে কোনো বার্তা দিয়েছেন এগুলো প্রতিরোধে?
হরষিত দেবনাথ: যেহেতু আমার বয়স হয়েছে আমি প্র্যাক্টিক্যালি পারি না তবে আমি লেখালেখির মাধ্যমে চেষ্টা করি সমাজের চোখ কীভাবে খুলে দেওয়া যায়।
হ্যালো: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৩। জেলা: সাতক্ষীরা।