‘আমার কাঁধে পতাকা ছিল’ (শেষ পর্ব)

১৯৭১ সালের ২রা মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলায় প্রথম জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। ঐতিহাসিক সেইদিনের কর্মসূচিতে অংশগ্রহণকারী, প্রত্যক্ষদর্শী, বীর মুক্তিযোদ্ধা এবং বঙ্গবন্ধুর নিকটতম ছাত্রকর্মী মহিব উল ইসলাম ইদু আন্দোলনের নানা স্মৃতি নিয়ে কথা বলেন হ্যালোর সঙ্গে। গল্প করেছেন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে পার হওয়া দিনগুলোর।
‘আমার কাঁধে পতাকা ছিল’ (শেষ পর্ব)

হ্যালোঃ কবে থেকে আপনারা মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে সম্মানটা পেতে থাকেন?

মহিব উল ইসলাম ইদুঃ শেখ হাসিনা ৯৬ সালে ক্ষমতায় এসে সম্ভবত ৯৭ কিংবা ৯৮ সালেই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য তিনশ টাকার একটা ভাতা চালু করেন। তখন আমাদেরকে অনেকেই খোঁচা দিয়ে বলতো যে আমরা ভিক্ষা নিচ্ছি। কিন্তু এখন তো আমি চিকিৎসা, সন্তানদের শিক্ষাসহ অনেক সুযোগই পাচ্ছি। টাকার পরিমাণ বেড়েছে। তবে সবকিছু চলছে তা নয়। অন্তত এই বয়সে ঔষধটা কেনার জন্য কারো মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হচ্ছে না একজন বীর মুক্তিযোদ্ধাকে। এখন তোমাদের বয়সীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করে গুরুত্ব দিয়ে ইতিহাস শুনতে আসো। তোমরা মানুষের সামনে আমাদের ঘটনাগুলো তুলে ধরো। এই সম্মানটা তো ৭৫ সালের পর থেকে ৯৬ এর আগে কেউ দেয়নি। এখন ‍নিজে গর্ব করি, বড় করে বলি আমি বীর মুক্তিযোদ্ধা। অনেকগুলো বছর পার হয়ে গেলেও আমরা এখন একটু শান্তি অনুভব করতে পারছি।

হ্যালোঃ সেই সময়টাতে সতীর্থদের সাথে ঐক্য কেমন ছিল?

মহিব উল ইসলাম ইদুঃ যার যার ক্রেডিট নেওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে গিয়েছিল অনেকে। অনেকে ঘটনার বিকৃতিও ঘটিয়েছিল কেউ কেউ। এরশাদের আমলে এ ধরণের ঘটনা ঘটেছিল। এর আগে ছাত্রলীগে বিভক্তি ঘটে। যে ছাত্রলীগে থেকে আমরা একত্রে কাজ করেছি সেই ছাত্রলীগ ছেড়ে আমার অনেক সতীর্থ জাসদে চলে যায়।

হ্যালোঃ এখন আপনার পরিবারে কে কে আছেন?

মহিব উল ইসলাম ইদুঃ আমার স্ত্রী মাকসুদা ইসলাম, মেয়ে শামিমা ইসলাম তুষ্টি এবং ছেলে আসিফ উল মহিব ফাল্গুন।

হ্যালোঃ এখনকার সময়গুলো কিভাবে কাটে? রাজনীতিতে সক্রিয় আছেন কি?

মহিব উল ইসলাম ইদুঃ না! এখন দলীয় কোনো পদে নেই। নিজের ইচ্ছাতেই সক্রিয় নই। তবে নেত্রীর প্রোগ্রামে মনের টানেই চলে যাই। ‘আমরা মানুষ ফাউন্ডেশন’ নামে আমাদের একটি সংগঠন আছে। স্কুল ভিত্তিক শিশুদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক কাজ করে থাকি। আমার ছেলে ও মেয়ে এই সংগঠনের সাথে আছে। তারা সব ধরণের সহযোগিতা করে। বর্তমানে আমরা বাংলাদেশের ৭১ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ৭১ দিনে ‘মুক্তির ইতিহাস শুনো’ প্রকল্প চালিয়ে যাচ্ছি। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ ও মুক্তিযোদ্ধা গবেষণা ট্রাস্টের মাধ্যমে সারা দেশে মুক্তিযোদ্ধাদের সাক্ষাৎকার গ্রহণ করছি। ২০২১ সালে স্বাধীনতার ৫০ বছর পূর্তিকে লক্ষ্য করে আমরা এ উদ্যোগটি হাতে নিয়েছি। ১০/১৫ মিনিট কাটছাট করে নয়। পুরো গল্প, একেক জনের ঘন্টাখানেকের সাক্ষাৎকার ধারণ করছি।

হ্যালোঃ বই পুস্তকে ইতিহাস পড়া অনেকের মত আমার কাছেও বিরক্তিকর। কিন্তু একজন দেশ নায়কের কাছে দেশের ইতিহাস শোনার ফলাফলটা যে কতটুকু চমকপ্রদ হয় তা আজ বুঝলাম। অনেক ধন্যবাদ আপনাকে আমাদের সময় দেওয়ার জন্য। আপনার দীর্ঘায়ু কামনা করছি।

মহিব উল ইসলাম ইদুঃ তোমাকেও অসংখ্য ধন্যবাদ। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের শিশু-কিশোর সাংবাদিক, সম্পাদক তোমাদের হ্যালো পরিবারকে আমার শুভেচ্ছা। আর পাঠকদের প্রতি আমার অনেক কৃতজ্ঞতা রইল।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com