সম্প্রতি হ্যালোর সাথে নিজের কষ্ট ও সংকটের কথা নিয়ে গল্প হয় এমন একটি মেয়ের। ও ২০১৬ সালে এইচএসসি পাশ করেছে। বাবা-মার বিচ্ছেদের পর সে আর তার ছোটো বোন বাবার সঙ্গে ঢাকায় থাকে।
[সঙ্গত কারণে মেয়েটির নাম প্রকাশ করা হলো না।- সম্পাদক]
-শুনেছি তোমার মা-বাবার বিচ্ছেদ হয়ে গেছে। সেটা কতদিন আগে?
- আমি তখন চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ি। তেমন কিছু বুঝতে পারিনি। দেখতাম বাবা-মা শুধু ঝগড়া করেন। উনাদের কাউকেই তখন আমার ভালো লাগত না। মনে হতো তাদের দুজনকে ছেড়ে চলে গেলে আমি ভালো থাকব।
- বাবা-মায়ের বিচ্ছেদ বিষয়টি তুমি কীভাবে গ্রহণ করলে?
- ভেবেছিলাম মা তো কতবারই রাগ করে ব্যাগ গুছিয়ে চলে যেতে চেয়েও যান না। তবে এবারেরটা যে শেষ চলে যাওয়া তা বুঝতে পারিনি।
- কেন এমন হলো বলে জানো?
- হঠাৎই বাবা-মার মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়। শুনেছি তারা ভালোবেসে বিয়ে করেছিলেন। কেন এমন হলো আমি জানি না।
- তোমরা কয় ভাই বোন?
- আমার একটা ছোট বোন আছে।
- পরিবারের অন্য সদস্যদের কেমন সহায়তা পেয়েছিলে? কার কাছে থাকতে তখন?
- মা চলে যাওয়ার পর আমরা বাবার সঙ্গেই থাকতে শুরু করি। একটা সময় ছোট চাচির কাছে গ্রামে চলে যাই। বোনকে পাঠিয়ে দেওয়া হয় নানার বাড়ি।
বলা হয়নি, আমার মার সঙ্গে বিয়ের আগে বাবা বিয়ে করেছিলেন। বিচ্ছেদের পর তাকেই আবার বিয়ে করেন বাবা। তখন আমরা আবার বাবার কাছে চলে আসি। নতুন মায়ের সাথে থাকতে শুরু করি। এভাবেই এখান থেকে ওখানে, ওখানে থেকে সেখানে, এভাবেই জীবন কাটছিল।
- নতুন মায়ের সাথে কেমন কাটছিল সময়? তিনি তোমাদের প্রতি কতটুকু আন্তরিক?
- উনার জন্যই বারবার জায়গা বদলাতে হয়েছে। উনি নানা ভাবে আমাকে বিপর্যস্ত করেছেন।
- বন্ধু-বান্ধব, শিক্ষক ও প্রতিবেশিদের দৃষ্টিভঙ্গি কেমন ছিল?
- আমার কোনো বন্ধু ছিল না। আমি মিশতে পারতাম না। তবে সে সময়টা কাটিয়ে উঠেছি। শিক্ষক শিক্ষিকা বলতে কারো সাথে তো সেভাবে সম্পর্ক গড়ে ওঠেনি। আমার তো কদিন পরপরই স্কুল পরিবর্তন করতে হয়েছে।
- জেএসসি, এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা দিয়েছ এখান থেকেই?
- আমি প্রস্তুতি ছাড়াই এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। বাসায় একটার পর একটা ঝামেলা লেগেই ছিল। পরীক্ষার দুই তিন মাস আগে তো একদমই পড়তে পারিনি। তখন আমার মায়ের কাছে চলে যাই। মামনির কাছে থেকে এসএসসি পরীক্ষা দিই।
- কেমন ঝামেলা হয়েছিল?
- আমার বৈমাত্রেয় বোন আছে। ওর একটা আইপড খুঁজে পাচ্ছিল না। তারপর সবাই আমাকেই দোষারোপ করে। বাবার কাছে বিচার দেয়। সেদিন রাতে আমার বিমাতা আর বাবা দুজনেই খুব মারধর করে। আমি অপমানে বাড়ি থেকে বের হয়ে বান্ধবীর বাসায় চলে যাই। তারপর বাবা সেখান থেকে আমাকে নিয়ে আসেন। এরপর আরও অনেক ঘটনার জন্য বাবা আমার গায়ে হাত তোলেন। অনেক কষ্ট পেয়েছিলাম প্রথম যেদিন বাবা আমার গায়ে হাত তুলেছিলেন।
- তোমার সাথে যে প্রতিনিয়ত এমন ঘটছে, তোমার পরিবারের অন্য কারো সহায়তা পাওনি তখন?
- আমার দাদা বেঁচে নেই। আর আমি তো অন্য কাউকে বলতাম না এসব। বলে কি হবে? ঘটছে তো রোজই। সবাই আর কত বিশ্বাস করবে? জানি না কেন জানি কাউকে এগুলো বলতে ইচ্ছে করে না।
- এখন কেমন আছ? কার সাথে আছ? ভবিষ্যত নিয়ে হতাশা কাজ করে? নাকি আত্মবিশ্বাস রয়েছে?
- বাবার সঙ্গেই আছি। এইচএসসি পরীক্ষা দিলাম প্রচণ্ড কষ্টে। এমনও হয়েছে পরীক্ষার একঘণ্টা আগেও আমি বাসায় কাজ করেছি। একটু সাহায্য কেউ করেনি। রেজাল্ট বের হল। ‘এ’ পেয়েছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি কোচিং করতে দেওয়া হচ্ছে না। ভর্তি নিয়েও সমস্যা হবে। আসলে স্বাভাবিক আর পাঁচজন ছেলেমেয়ের মতো আমার জীবনের কোনো লক্ষ্য নাই।