স্কুলে সুপেয় পানি না পাওয়া যাওয়ায় বাসা থেকে পানি নিয়ে যেতে হয় বলে জানায় এক শিশু।
Published : 19 Dec 2024, 08:17 PM
লবণাক্ততার জন্য পানযোগ্য পানি সেখানে সহজলভ্য নয়। গভীর নলকূপ থাকলেও তাতে সবসময় মেলে না সুপেয় পানি। দূরের পথ পাড়ি দিয়ে কিংবা বৃষ্টির পানি সংরক্ষণ করে তৃষ্ণা মেটায় মানুষ। বাগেরহাট সদর উপজেলার বেমরতা ইউনিয়নের বাসিন্দাদের কাছে এমন দৃশ্য খুবই পরিচিত।
সেখানকার বাঁশসালা ও সুলতানপুর গ্রামে গিয়ে এ প্রসঙ্গে স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের প্রতিবেদক।
সিয়াম নামে বাঁশসালা গ্রামের এক শিশু স্থানীয় একটি বিদ্যালয়ের দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ছে।
হ্যালোকে সে বলছিল, “আমার দূর থেকে পানি আনতে কষ্ট হয়। এতে আমার স্কুলে যেতে দেরি হয়।”
মাকসুদা বেগম নামে এক গৃহিণী বলেন, “লবণের সময় আমাদের মনে করেন খাবার পানিতে সমস্যা, রান্নাবান্না করার সমস্যা। পানিতে এত পরিমাণ লবণ যেন মুখে নেওয়ার কায়দা নেই।”
স্কুলে সুপেয় পানি না পাওয়া যাওয়ায় বাসা থেকে পানি নিয়ে যেতে হয় বলে জানায় সুমাইয়া ইসলাম নামে সুলতানপুর গ্রামের এক শিশু।
চতুর্থ শ্রেণিতে পড়ুয়া এই শিক্ষার্থী বলে, “আমাদের স্কুলে কোনো ভালো পানি পাওয়া যায় না। তাই আমরা বাড়ি থেকে পানি নিয়ে আসি এবং যদি আমাদের পানি ফুরিয়ে যায় পাশের বাড়ি কল আছে সেখানে অল্প লবণ পানি আছে সেখান থেকে আমরা পানি এনে পান করি।”
তবে এভাবে ব্যবহার করতে থাকলে এর ফলাফল খুব একটা ভালো হবে না। এর স্বাস্থঝুঁকি রয়েছে বলে সতর্ক করেছেন চিকিৎসক।
সদর উপজেলার স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বকশির সঙ্গে এই বিষয়ে হ্যালোর কথা হয়। এই চিকিৎসকের মতে সবচেয়ে বেশি স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছে গর্ভবতী মায়েরা।
তিনি বলেন, “গর্ভাবস্থায় যদি লবণাক্ত পানি ব্যবহার করা হয় সেক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপ, খিচুনি, অকাল গর্ভপাত, কম ওজনের শিশু জন্মদান এবং অনেক ক্ষেত্রে গর্ভের সন্তান মারা যেতে পারে।”
তিনি আরও বলেন, “স্বাস্থ্যগত ঝুঁকির মধ্যে গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা বা গ্যাস্ট্রিক আলসার, উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক ও হার্ট অ্যাটাকের আশঙ্কা রয়েছে। পাশাপাশি যারা দৈনন্দিন কাজে বা গোসলের কাজে লবণাক্ত পানি ব্যবহার করে তাদের বিভিন্ন চর্মরোগে ভোগার আশঙ্কা আছে।”
একজন পূর্ণবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন দুই গ্রামের বেশি সোডিয়াম ক্লোরাইড বা লবণ গ্রহণ করা উচিত না বলে জানিয়ে তিনি বলেন, “একটা স্টাডিতে দেখা গেছে, এখানকার মানুষ প্রতিদিন গড়ে পাঁচ গ্রামের বেশি এবং কোনো কোনো ক্ষেত্রে ১৩ থেকে ১৪ গ্রাম সোডিয়াম ক্লোরাইড ইনটেক করে। যা শরীরের জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ।”
এদিকে লবণাক্ততা নিয়ে আরও দুঃসংবাদ দিলেন বিশেষজ্ঞ। তার মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব লবণাক্ততা বৃদ্ধির জন্য অন্যতম কারণ। তাই এই সমস্যা আরও প্রকট হতে পারে।
মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউটের খুলনা বিভাগীয় কার্যালয়ের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা জি. এম. মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলে হ্যালো।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “আমরা বিভিন্ন জরিপ চলাকালে দেখেছি বাগেরহাটের বিভিন্ন স্থানের মাটি ও পানিতে লবণাক্ততার মাত্রা যেমন বাড়ছে তেমনি নতুন নতুন এলাকাও লবণাক্ততায় আক্রান্ত হচ্ছে। এর পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনেরও দায় আছে। বার্ষিক বৃষ্টিপাত একই থাকলেও প্রয়োজনের সময় দেখা যায় বৃষ্টিপাত কম হচ্ছে, আবার যখন বৃষ্টিপাত হচ্ছে তখন অনেক বেশি হচ্ছে। এই অনিয়মিত বৃষ্টিপাতও লবণাক্ততা বৃদ্ধির জন্য দায়ী।”
সরকারের তরফ থেকে কী করা হচ্ছে তা জানতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দীপংকর দাশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়।
সুপেয় পানি নিশ্চিতের জন্য জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের দুটি প্রকল্প চলমান আছে জানিয়ে তিনি বলেন, “একটা হল পানির ট্যাংকি অর্থাৎ বর্ষাকালে যে বৃষ্টি হয় সেটা থেকে পানি রিজার্ভ করে রাখা হয়। আরেকটা হলো ডিপ টিউবয়েল ব্যবহার করা হয়। অনেক জায়গায় ডিপ টিউবওয়েল দেওয়া হচ্ছে সেখান থেকে সুপেয় পানি পাওয়া যাচ্ছে। কিছু কিছু ইউনিয়নের সমস্যা আছে সেটা আমরা অন্যভাবে দেখব।”
সুপেয় পানির জন্য সরকার ও বিভিন্ন বেসরকারি উদ্যোগ থাকলেও এগুলো যথেষ্ট নয় বলে জানান স্থানীয়রা। তাদের চাওয়া পানযোগ্য পানির পাশাপাশি ব্যবহারযোগ্য পানিও যেন সহজলভ্য হয়। এজন্য মিঠা পানির উৎস বাড়ানোর দাবি জানিয়েছে তারা।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৩। জেলা: বাগেরহাট।