‘বাল্যবিয়ে দিয়ে সন্তানকে আগুনে ফেলে দেবেন না’ (ভিডিওসহ)

“সামাজিকভাবে যারা আমরা দায়বদ্ধ তারা কিন্তু আমাদের দায় এড়াতে পারি না। আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে যেন আমরা শিশুদের সঠিক মেসেজটা দিতে পারি “

বাল্যবিয়ে দেওয়ার অর্থ একটি শিশুকে আগুনের মধ্যে ফেলে দেওয়া, তাই নিজের সন্তানকে কখনো এভাবে আগুনে ফেলে দিতে চান না বাগেরহাটের সদর উপজেলার পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা প্রদীপ কুমার বকশী। বাল্যবিয়ের প্রভাবে কিশোরীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি প্রসঙ্গে হ্যালো ডট বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের সঙ্গে এক আলাপচারিতায় এ মন্তব্য করেন এই চিকিৎসক।

হ্যালো: শিশু বিবাহ প্রতিরোধে একজন চিকিৎসক হিসেবে সমাজের জন্য কী বার্তা দিতে চান?

প্রদীপ কুমার বকশী: অবশ্যই যেহেতু আমি একজন চিকিৎসক তাই শারীরিক বিষয়গুলো সম্পর্কেই আমার ধারণা স্পষ্ট। সেই প্রেক্ষাপটে আমি বলব, কোনো অবস্থাতেই একজন নারী ২১ বছর বয়সের আগে মা হবে না।
আর যদি প্রতিরোধের কথা বলি, প্রতিরোধের সঙ্গে আসলে সমাজের অনেক বিষয় জড়িত। এজন্য সোশ্যাল সিকিউরিটি, পারিবারিক শিক্ষা, অস্পষ্ট ধারণা, ধর্মীয় কুসংস্কার ও সামাজিক অনেক বিষয়ই বাধ্য করে একজন কিশোরীকে বিয়ে দিতে।

সেই জায়গাগুলো খুঁজে বের করে আমাদের সবার সুধীজন, মিডিয়া, সাংবাদিক, চিকিৎসক সবাইকেই একটা সামাজিক স্লোগান তৈরি করতে হবে। পুরো পরিবারটিকে যেন আমরা বিপথগামীতার দিকে নিয়ে না যাই। আমি একটা কথা বলব যে, ছেলে-মেয়েদের মধ্যে আমাদের বিপরীত লিঙ্গের প্রতি একটা আকর্ষণ থাকে, কৈশোরকালীন কিছু প্রেম-ভালোবাসা হয় এবং তারা নিজেরাও কিছু ভুল পথে যায়। আসলে জীবন সম্পর্কে তাদের জানতে হবে। কোন বয়সের জন্য কোনটি উপযুক্ত সেটা জেনে তারা যে ভালো মানুষ হবে, পড়াশোনা করবে, এদেশের উন্নয়নে কাজ করবে এই যে স্বপ্ন তাদের মধ্যে বুনে দিতে হবে।

এখানে শিক্ষকদেরও একটা বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। মহামারির সময়ে আমরা দেখেছি যে প্রায় দুই বছর স্কুল যখন বন্ধ ছিল, বিশেষ করে এই সময়টায় বেশ কিছু বাল্যবিবাহ হয়েছে। যেহেতু স্কুল বন্ধ ছিল শিক্ষকদের সঙ্গে তাদের অ্যাটাচমেন্টও কম ছিল। সামাজিকভাবে যারা আমরা দায়বদ্ধ তারা কিন্তু আমাদের দায় এড়াতে পারি না। আমাদের সবাইকে কাজ করতে হবে যেন আমরা শিশুদের সঠিক মেসেজটা দিতে পারি।

আমরা একটা উন্নত বাংলাদেশের কথা বলি কিন্তু এখনো পর্যন্ত আমাদের অনেক অভিভাবক কিন্তু সেই বিষয় সম্পর্কে খুব ভালো জানেন না। তারা মনে করে্ন, আমার মেয়ের ১৪ বছর বয়স, তাকে অন্যের হাতে তুলে দিলেই আমি হয়ত দায় এড়ালাম। কিন্তু আসলে দায় এড়ানো যায় না। সেই মেয়ে যখন সন্তান জন্ম দিতে গিয়ে মারা যাবে তখন সে বাবা-মায়ের কিন্তু সবটুকু শেষ হয়ে যাবে। অল্প বয়সে মেয়েটিকে বিয়ে দিলে আগুনের মধ্যে ফেলে দেওয়া হয়।

আমি কিন্তু বলব বাল্যবিবাহটার মাধ্যমে আমি আমার সন্তানকে আগুনের মধ্যে ফেলে দিতে চাই না। আমি শিশুদের উদ্দেশ্যে বলব এখন ইন্টারনেটের যুগ। তোমরা ইন্টারনেট বাল্যবিয়ের কুফল সম্পর্কে তথ্য পাবে। অথবা তোমার পরিচিত যদি কোনো ডাক্তার থাকেন তার সঙ্গে যোগাযোগ কর, এ বিষয় সম্পর্কে জানো। কোনো অবস্থাতেই এই ভুল পথে যাওয়া যাবে না। আর অভিভাবকদের উদ্দেশ্যে বলব, আপনাদের সন্তানকে মৃত্যুর মুখে ঠেলে দেবেন না। একজন ডাক্তার হিসেবে আমার অনুরোধ।

প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: বাগেরহাট।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com