গাজীপুর সিটি ভোট: মেয়র প্রার্থীদের ইশতেহারে শিশুদের গুরুত্ব কম কেন?

প্রতিনিধিত্বশীল ছবি

গাজীপুর সিটি ভোট: মেয়র প্রার্থীদের ইশতেহারে শিশুদের গুরুত্ব কম কেন?

আমি প্রত্যাশা করেছিলাম শিশুদের নানা সমস্যা সমাধানে সকল প্রার্থীই নিজের সরব অবস্থান তুলে ধরবেন।

আমার জীবনের বড় একটা অংশ গাজীপুরে কাটিয়েছি। মহানগরের ৩৬ নং ওয়ার্ডে আমাদের বাড়ি।

যদিও পড়াশোনার জন্য এখন আমি ঢাকায় থাকি, তবুও গাজীপুরের প্রতি আমার অন্যরকম ভালোবাসা আছে। তাই আমার শহরের উন্নয়নের জন্য সিটি করপোরেশন নির্বাচন ঘিরে আমার আগ্রহ ও নানা প্রত্যাশা রয়েছে।

গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে এবার যারা প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন, আমি মোটামুটিভাবে সবার ইশতেহারই ইন্টারনেটের সাহায্য নিয়ে পড়েছি। একটা বিষয় আমার নজরে এসেছে যে, আমাদের মেয়র প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে শিশুদের গুরুত্ব খুবই কম!

মৌলিক অধিকার হিসেবে শিক্ষার বিষয়টি অনেক প্রার্থীর ইশতেহারেই এসেছে। কিন্তু আমি বলতে চাচ্ছি, আমাদের গাজীপুরে যে খেলার মাঠের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে, শিশুদের বিনোদনসহ নানা সুযোগ-সুবিধা কমে যাচ্ছে- এটা কেন মেয়র প্রার্থীদের নজরে এল না? যারা জনগণের প্রতিনিধি হবেন তাদের ইশতেহারে ‘শিশু’ শব্দটি খুঁজে পেতে এত কষ্ট কেন হবে?

আমাদের মহানগরে অনেক স্কুল আছে, যারা শুধু ভবন ভাড়া নিয়ে পাঠদান করাচ্ছে, শিক্ষার্থীদের জন্য নেই কোনো মাঠ। শুধু তাই নয়, আমাদের সিটি করপোরেশন অঞ্চলে পর্যাপ্ত বিনোদনকেন্দ্রও নেই।

আমার বাড়ি যে এলাকায় সেখানকার চিত্র দেখলে মনে হয় এটা হয়ত একটা ইউনিয়ন। বাড়ির কাছে আধুনিক সুযোগ সুবিধা খুব কমই আছে।

আর নতুন একটি সমস্যা উদ্ভব হয়েছে তা হলো কিশোর গ্যাং। স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা নানা ধরনের কিশোর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে।

এছাড়াও আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, আমাদের গাজীপুরে লক্ষ লক্ষ পোশাক শ্রমিক থাকেন। সাবেক মেয়রের একটি সাক্ষাৎকারে শুনেছিলাম যে, ২৪ লাখ পোশাক শ্রমিক থাকেন এখানে। এই শ্রমিকদের বেশিরভাগই নারী। তাদের অনেকের সঙ্গে শিশু সন্তান রয়েছে। এই শিশুদের স্বাস্থ্য, বিনোদন, পড়াশোনা সর্বোপরী তাদের সুপ্ত সম্ভাবনার বিকাশে বেশ মোটা দাগে ইশতেহারে বলা হবে এমনটাই চেয়েছিলাম। কেননা, এই পোশাক শ্রমিকদের জন্যই তো বিশ্বজুড়ে আমরা খ্যাতি অর্জন করতে পেরেছি।

আমি প্রত্যাশা করেছিলাম শিশুদের নানা সমস্যা সমাধানে সকল প্রার্থীই নিজের সরব অবস্থান তুলে ধরবেন। তাদের কথার প্রথমেই থাকবে শিশুদের বিষয়গুলো। কিন্তু সেরকম কিছু আমার নজরে আসেনি!

একজন প্রার্থীর ইশতেহারে দেখতে পেয়েছি, তিনি ৫৭টি সুপরিসর খেলার মাঠ এবং ৫৭টি ওয়ার্ডে ৫৭টি শিশু পার্ক নির্মাণের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এই বিষয়টি দেখে আমার খুবই ভালো লেগেছে। তিনি ‘হ্যাভিওয়েট’ প্রার্থী না হলেও তার চিন্তাধারার প্রশংসা না করলেই নয়। আমি এটাই চেয়েছিলাম আমাদের প্রার্থীদের কাছে।

শিশুরা ভোটার নয়, তাই বলে কি শিশুরা ইশতেহারে কম গুরুত্ব পাবে? আমি মনে করি শিশুদের জন্য কাজ করলেই দেশের জন্য কাজ করা। কেননা শিশুরাই দেশের ভবিষ্যৎ সম্পদ।

আমাদের প্রার্থীরা যদি শিশুদের কথা গুরুত্ব দিয়ে বলতেন তাহলে সাধারণ মানুষের কাছেও শিশুদের মতামতের গুরুত্ব সম্পর্কে ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে যেত।

সবশেষে আমি এটাই আবেদন করব যে, মেয়র হিসেবে যাকে পেতে যাচ্ছে গাজীপুর, তিনি শিশুদের জন্য নিরলসভাবে কাজ করে যাবেন।

প্রতিবেদেকের বয়স: ১৩। জেলা: ঢাকা।

Related Stories

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com