'বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি থেকে সন্তান নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয় মেয়েটিকে। এসএসসি পরীক্ষায় বসার আগেই তার এক সন্তানের জন্ম হয়।'
Published : 28 Mar 2024, 11:47 AM
কিছু দিন আগে শেরপুরের কামারের চর নামে একটি এলাকায় ঘুরতে যাই। সেখানেই কথা হয় বাল্যবিয়ের শিকার এক কিশোরীর সঙ্গে। সঙ্গত কারণেই তার নাম প্রকাশ করতে পারছি না।
সন্তানকে খাবার খাওয়াতে খাওয়াতে আমার সঙ্গে কথা বলে সে। জানায়, অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময় তাকে পরিবার থেকে বিয়ে দেয়। এতে তার সম্মতি না থাকলেও, বাবা মা জোর করে বিয়ে দেন।
মূলত সামাজিক নিরাপত্তার অভাব ও আর্থিক অসচ্ছলতার কথা বলে তাকে বিয়েতে রাজি করায় তার বাবা মা। মেয়ে দেখতে হাতে পায়ে বড় হয়ে গেছে। এ কারণেই তারা বয়সকে প্রাধান্য না দিয়েই মেয়েকে বিয়ে দেন।
বিয়ের পর শ্বশুর বাড়ি থেকে সন্তান নেওয়ার জন্য চাপ দেওয়া হয় মেয়েটিকে। এসএসসি পরীক্ষায় বসার আগেই তার এক সন্তানের জন্ম হয়। এরপর আর পড়াশোনা হয়নি। সন্তানের মা হওয়ার পর তার শরীরে নানা জটিলতাও দেখা দেয়।
মেয়েটি এখন বাল্যবিয়ের সবগুলো ক্ষতিকর দিক বুঝতে পেরেছে। সে চায় তার এলাকায় কোনো মেয়ের যেন আর বাল্যবিয়ে না হয়। এমন ভাবে যেন আর কোনো মেয়েই ক্ষতির শিকার না হয়।
বাল্যবিয়ে নিয়ে এখন অনেক সচেতন মেয়েটি। সে নিজ থেকেই বলে,বাল্যবিয়ের কারণে একজন মেয়ের জীবনে অনেক ঝুঁকিপূর্ণ ঘটনা ঘটে। সন্তান জন্মের সময় মাতৃমৃত্যুর ঝুঁকি থাকে। অপরিণত বয়সে গর্ভধারণ ঘটে ফলে নানা শারীরিক অসুখ দেখা দেয়। প্রসবকালীন শিশুরও মৃত্যু ঝুঁকি থাকে। নারী শিক্ষার হার হ্রাস পায়। ফলে এই সব এলাকার নারীরা পিছিয়ে থাকে।
তার আশেপাশে যেন কোনো মেয়ের বাল্যবিয়ে না হয়, সে জন্য মেয়েটি সবাইকে সচেতনমূলক কথা বলে সচেতন করতে চেষ্টা করে। মেয়েদের পড়াশোনায় আগ্রহী করে তোলারও চেষ্টা করে।
সে মনে করে শহরের তুলনায় গ্রামে বাল্যবিয়ের হার বেশি। তাই বাল্যবিয়ে প্রতিরোধের অন্যতম কার্যকর উপায় হলো গ্রামের মেয়েদের শিক্ষার হার বাড়ানো ও তাদের মাঝে বাল্যবিয়ে বিরুদ্ধে সচেতনতামূলক কথা ছড়িয়ে দেয়া।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৫। জেলা: শেরপুর।