স্যানিটারি প্যাড আমাদের দেশে বিলাসী পণ্য হিসেবে পরিচিত। এর উপর আরোপ করা হয়েছে ভ্যাট।
Published : 30 Oct 2024, 08:40 PM
ঋতুস্রাব বা মাসিক প্রতিটি নারীর জীবনেই একটি স্বাভাবিক ঘটনা। কিন্তু আমাদের সমাজে এটাকে ঠিক স্বাভাবিক হিসেবে দেখা হয় না। ট্যাবুর জন্য এদেশের অনেক কিশোরীর কাছেই ঋতুস্রাব এক যন্ত্রণার নাম।
স্বাভাবিকভাবে বয়ঃসন্ধিকালে সব মেয়েরই ঋতুস্রাব শুরু হয়। কিন্তু আমাদের দেশের বেশিরভাগ মেয়েই আগে থেকে ঋতুস্রাব সম্পর্কে ধারণা পায় না। গার্হস্থ্য বিজ্ঞান বা শারীরিক শিক্ষা বইতে ঋতুস্রাব সম্পর্কে লেখা থাকলেও তা অনেক সময়ই পড়ানো হয় না, বাড়ি থেকে পড়ে আসতে বলা হয়। ঋতুস্রাব নিয়ে স্পষ্ট ধারণা না থাকায় তারা ক্যান্সার ও প্রজনন স্বাস্থ্য নিয়ে ভীষণ ঝুঁকিতে থাকে।
কয়েকদিন আগে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পড়ে রীতিমতো শিউরে উঠি। এক গবেষণার বরাত দিয়ে সেখানে বলা হয়, ঋতুস্রাবের সময় মাত্র তিন শতাংশ কিশোরী প্যাড ব্যাবহার করে। ৮৬ শতাংশ কিশোরী কাপড় এবং বাকিরা তুলা, টিস্যু ও ট্যাম্পন ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকে। এই তিন শতাংশের অর্ধেকই আবার দিনে মাত্র একবার সেই প্যাড পরিবর্তন করে থাকে।
এর পেছনে অনেক কারণ থাকতে পারে। পাবলিক প্লেস যেমন বিদ্যালয় বা কর্মস্থলে প্যাড পরিবর্তনের সুবিধা না থাকায় অনেক নারী সারাদিন প্যাড পরিবর্তনের সুযোগ পায় না। অন্যদিকে স্যানিটারি প্যাডের দামও নেহায়েত কম নয়। অনেক পরিবারেই এটাকে বাড়তি খরচ হিসেবে ধরা হয়।
স্যানিটারি প্যাড আমাদের দেশে বিলাসী পণ্য হিসেবে পরিচিত। এর উপর আরোপ করা হয়েছে ভ্যাট। এক প্যাকেট প্যাডের দাম ১২০ থেকে ২০০ টাকা। এক্ষেত্রে অনেক সময় শিক্ষকরা প্যাডের পরিবর্তে পরিষ্কার কাপড় ব্যবহারের পরামর্শও দিয়ে থাকেন। তবে একই কাপড় বার বার ব্যবহার করলে সেটি থেকে সংক্রমণ হওয়ার সম্ভাবনা থেকে যায়।
আরও ভয়ঙ্কর ব্যাপার হলো পথকিশোরীরা ঋতুস্রাবের সময় যে কাপড় ব্যবহার করে তা জীবাণুমুক্ত নয়। কুড়োনো কাপড়ে থেকে যায় প্রজননতন্ত্রে সংক্রমণের ঝুঁকি।
বছর দুয়েক আগে সাতক্ষীরার কৈখালী ইউনিয়নের মেয়েদের লবণাক্ততার কারণে পিল খেয়ে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখার খবর দেখেছিলাম। উপকূলীয় অঞ্চলে লবণাক্ততা একটি মারাত্মক সমস্যা। লবণাক্ত পানি ব্যবহারের কারণে জরায়ুর বিভিন্ন সমস্যায় আক্রান্ত হয় কিশোরীরা। এ থেকে বাঁচতে তারা বেছে নেয় আরও ক্ষতিকর এক পন্থা। পিল খেয়ে ঋতুস্রাব বন্ধ রাখা। যার ফলে দীর্ঘমেয়াদী সমস্যা হওয়ার ঝুঁকি থেকে যায়।
ঋতুস্রাব হলো মেয়েদের মা হওয়ার শক্তি। এটি কোনো পাপ বা অন্যায় নয় যে এটাকে ট্যাবু করে রাখতে হবে। আমাদের দেশে ঋতুস্রাব শুরু হওয়ার আগে বেশিরভাগ মেয়েই ঋতুস্রাব সম্পর্কে কোনো ধারণা রাখে না, এরফলে তারা ঘাবড়ে যায়। এই অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে, ভেঙে ফেলতে হবে ট্যাবু।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৬। জেলা: ঢাকা।