“অমর একুশে বইমেলা আমাদের আবেগের একটা জায়গা। বইমেলার শৃঙ্খলা বা চর্চাগুলো দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং আমরা তা শিখতে পারি।”
Published : 17 Feb 2025, 08:29 PM
অমর একুশে বইমেলা আমাদের হৃদয়ের সঙ্গে যুক্ত। ফেব্রুয়ারি মাসে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণ ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানজুড়ে যে মেলায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম ঘটে।
একুশে বইমেলা আমার খুবই প্রিয় একটি জায়গা। স্কুলের পরীক্ষা কিংবা করোনাভাইরাস মহামারি- এসব পরিস্থিতিতেও একদিনের জন্য হলেও মেলায় গিয়েছি। মেলা থেকে বই কম কেনা হলেও মেলায় যাওয়াটাই আমার কাছে গুরুত্বপূর্ণ।
এবারের বইমেলা নিয়ে প্রথম দিন থেকেই মন খারাপ হচ্ছে। কারণ, বেশ কয়েক বছরের মত এবারও ভালো মানের বইয়ের প্রচার তরুণ প্রজন্মের চোখের আড়ালে থেকে যাচ্ছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোনোভাবে পরিচিতি পেয়ে গেছে শুধু এমন লোকের বই কিনতে হুমড়ি খেয়ে পড়ছে স্কুল-কলেজ পড়ুয়ারা।
আমি এই লেখকদের বই নিষিদ্ধের পক্ষে না, অবশ্যই সবার বই প্রকাশের অধিকার আছে। আমি শুধু নতুন প্রজন্মের বই সচেতনতা নিয়ে বলছি। আমরা যেন লেখকের পরিচিত মুখ দেখে বই কেনার চেয়ে বেশি গুরুত্ব দেই বইয়ের মানকে।
আমি বিশ্বাস করি, বইমেলা এমন এক খোলা জায়গা যেখানে সব মতের মিলনমেলা ঘটে। কিন্তু খবরে দেখলাম এক লেখকের বই নিয়ে উত্তেজনা সৃষ্টি হয়, স্টলে চড়াও হয় ‘তৌহিদী জনতা’। কোনো লেখকের বই অপছন্দ হলে আমরা এড়িয়ে যেতে পারি বা প্রতিবাদ জানাতে পারি। কাউকে আক্রমণ করতে বা স্টলে হামলা করতে তো আর যেতে পারি না।
শুধু তাই নয়, এরপর স্যানিটারি ন্যাপকিন ও ডায়াপার বিক্রি করায় একটি স্টল বন্ধের নির্দেশনা দেওয়া নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আলোচনা তৈরি হয়। ‘ইসলামিস্ট গ্রুপের মব’ এর ভয়ে স্টলটি বন্ধ করা হয়েছে বলে অনেকেই দাবি করে।
তবে বাংলা একাডেমি গণমাধ্যমকে জানায়, অনুমোদন না থাকায় স্টলটি বন্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। বইমেলার নীতি অনুযায়ী মেলায় বই ও খাবার ছাড়া অন্য কিছু বিক্রির সুযোগ নেই।
তবে মানুষের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার প্রেক্ষিতে বাংলা একাডেমি ঘোষণা দেয়, বইমেলায় বিনা মূল্যে স্যানিটারি ন্যাপকিন বিতরণ চলবে।
আমার প্রশ্ন হল- ন্যাপকিন তো জনস্বাস্থ্যের সঙ্গে জড়িত, তাহলে কেন সেটা মানুষের ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়ার পর ব্যবস্থা করা হবে? এটা তো আরো আগে বিবেচনা করা উচিত ছিল!
অমর একুশে বইমেলা আমাদের আবেগের একটা জায়গা। বইমেলার শৃঙ্খলা বা চর্চাগুলো দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে এবং আমরা তা শিখতে পারি। তাই তাদের কাছে খুবই দূরদর্শী সিদ্ধান্ত প্রত্যাশা করি। বইমেলা ঘিরে এসব ঘটলে আমাদের ভাষা সৈনিকদের সম্মানহানী হয়। বিশ্বের কাছেও আমাদের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হয়।
প্রতিবেদকের বয়স: ১৭। জেলা: ঢাকা।