আশাশুনির প্রতাপনগরের মাটিতে বেড়ে ওঠা সন্তান হিসেবে স্বচক্ষে আমি দেখেছি এখানকার জীবন কতটা বিষাদময়। এখানকার অধিকাংশ মানুষ কৃষক, দিন মজুর, ভ্যান চালক, মাছ চাষী। কেউ কেউ আবার জেলে, যারা সুন্দরবনের বাঘের সাথে লড়াই করে জীবিকার প্রয়োজনে। আবার অনেকেই চলে যান বঙ্গোপসাগরের গহীন জলরাশিতে পরিবারের মুখে দুমুঠো খাবার তুলে দিতে।
আর তারা বাস করেন মাটির কিংবা কাঠের তৈরি ঘরে। যেগুলো টিন কিংবা গোলপাতার ছাউনি দিয়ে তৈরি। কখনো আইলা, কখনো সিডর, কখনো নার্গিস- একের পর এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের কবলে পিষ্ট হতে হয় এই অঞ্চলের মানুষদের। প্রতিবারই যখন কোনো দুর্যোগ আসে, স্বপ্ন ভঙ্গ হয় বহু মানুষের। জীবন ও সম্পদের এত পরিমাণ ক্ষতি মানুষের পক্ষে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তবুও জীবনের প্রয়োজনে সামলে নিতে হয় সবকিছু।
এ অঞ্চলে সবচেয়ে বড় অভিশাপ হলো নদী ভাঙনের খেলা। সর্বনাশা স্রোতের সাথে ভেসে যায় রঙিন স্বপ্নগুলো। লোনা পানির নিচে তলিয়ে যায় সুখের ঠিকানা। নদীর জোয়ারের পানিতে ভেঙে পড়ে মানুষের ঘর, ভেঙে যায় কাঠের ঘর, উড়ে যায় টিনের চাল, ভেসে যায় গোলপাতার ছাউনি।
একটি নির্দিষ্ট স্তুপ কিংবা দ্বীপের মত ভূমির ওপর কাটাতে হয় জীবন। যার একপাশে ভেসে এসে লেগে থাকে মরা লাশ, অপর দিকে মুখ ঘুরিয়ে খেতে বসতে হয়। এই অসহনীয় পরিস্থিতিকে পুঁজি করে এক শ্রেণির মানুষের চলে রাজনীতি। জনপ্রতিনিধিদের অনেকে সুন্দর সুন্দর বুলি দিয়ে সহজ সরল মানুষের মানুষের মন কেড়ে নেন, কিন্তু কাজের কাজ করেন না।
দীর্ঘ ১২/১৪ বছর যাবৎ এ অঞ্চলের মানুষের অবকাঠামো পরিবর্তনের মিথ্যা আশ্বাস শুনে আসছি। আমার পূর্বপুরুষরাও হয়ত আরও বেশি ভুক্তভোগী ছিল। আমাদের এখানকার মানুষের এখন গণদাবি, "আমরা ত্রাণ নয়, টেকসই বাঁধ চাই"। জানি না আদৌ হবে কিনা। তবুও আশায় বুক বেধে বেঁচে আছি।