প্রত্যেক ঈদে চাচাত ভাইবোনরা মিলে কোথাও না কোথাও ঘুরতে যাই। না গেলে ঈদকে যেন ঈদই মনে হয় না। তাই ঈদের পরের দিনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় এবার আমরা তিস্তা ব্যারেজ দেখতে যাব। অন্যদিকে দুদিন পরেই দেশজুড়ে শুরু হবে লকডাউন তাই এই দিনটিই ছিল আমাদের একমাত্র উপায়।
তিস্তা ব্যারেজ আমাদের বাসা থেকে ৪০ কিলোমিটার দূরে। লালমনিহাট জেলার হাতীবান্ধা উপজেলায় তিস্তা নদীর উপর নির্মিত এটি। সকাল সকাল আমরা গাড়িতে করে পৌঁছে যাই সেখানে। তিস্তা ব্যারেজ এলাকাতে ঢুকেই এক অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে হারিয়ে যাই আমরা।
লকডাউন না থাকায় এবং ঈদ উপলক্ষে কিছুটা ভীড় ছিল। কেউ স্বাস্থ্যবিধি মেনেছে কেউ মানেনি। তবে আমরা স্বাস্থ্যবিধির বিষয়টি খেয়াল রেখেছিলাম।
শুকনো মৌসুমে নদীতে পানি না থাকলেও বর্ষায় নদীতে থৈ থৈ পানি। উদ্দাম ঢেউয়ের সাথে তাল মিলিয়ে মাঝিদের ছোট ছোট ডিঙি নাউ সৌন্দর্যের পসরা সাজিয়েছে। ব্যারেজের দু’পাশে বিরাট এলাকা জুড়ে রয়েছে সবুজ বনায়ন। নদীর তীরে বড় বড় গাছ স্থানটিকে করেছে অপরূপ। হাজার হাজার পাখির আনাগোনা আর কিচিরমিচির সত্যিই মনমুগ্ধকর।
তিস্তার আশেপাশে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে বনভূমির পাশাপাশি তৈরি করা হয়েছে পাথুরে বাঁধ। এই বাঁধের পাশেই বসে নদীর সৌন্দর্য উপভোগ করে দর্শনার্থীরা। নদী ঘুরে দেখার জন্য রয়েছে স্পিডবোট ও ইঞ্জিনচালিত নৌকাও।
আমি ও আমার তিন চাচাতো ভাইসহ আমরা একটি স্পিড বোট করে ঘুরে বেড়ালাম। নদীর স্রোতের সাথে স্পিডবোটের উঠানামা এক অন্যরকম অনুভূতি। তবে সাঁতার না জানলে নৌকাভ্রমণ না করাই ভালো।
১৯৭৯ সালে তিস্তা ব্যারেজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। উদ্বোধন করা হয় ১৯৯০ সালে।
ঘুরতে ঘুরতে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে আসে, সূর্যও ধীরে ধীরে পশ্চিম আকাশে ঢলে পড়ে। সূর্যের সোনালী আভা তিস্তার সুবিস্তৃত জলরাশিতে প্রতিফলিত হয়ে এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্যের অবতারণা করেছিল। সন্ধ্যার সূর্যকে বিদায় জানিয়ে একরাশ ভালোলাগা আর তৃপ্তিকর অনুভূতি নিয়ে আমরা ফিরে আসি বাড়ি।