মায়ের জন্য বড় হতে চাই

তখন পঞ্চম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা শেষ হয়েছে আমার। ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির প্রক্রিয়া চলছে। আমার বন্ধুরা ভর্তি হয়ে গেছে, কিন্তু আমি তখনো হইনি। কারণ সে সময় আমার পরিবারে খুবই আর্থিক টানাপোড়েন চলছিল।
মায়ের জন্য বড় হতে চাই

বাবা আমাকে বললেন স্কুলে ভর্তি হতে হবে না। এদিকে আমার কান্না দেখে কে, ভেতরটা কুঁকড়ে যাচ্ছিল। বন্ধুরা সবাই ভর্তি হয়ে গেছে, আমি পারছি না এই আক্ষেপটা কাউকে বলে বোঝানোর মতো না।

এদিকে মা চাচ্ছিলেন আমাকে স্কুলে ভর্তি করতে। হয়ত মা আমাকে বুঝতে পেরেছিলেন। মা নিজের জমানো টাকাগুলো সব আমাকে দিয়ে দিলেন। আর আমারও কিছু জমানো টাকা ছিল। সব মিলিয়ে স্কুলে ভর্তি হয়ে যাই।

স্কুলে ক্লাস শুরু হয়। এক মাস পেরোতেই বাঁধে বিপত্তি। এবার স্কুলে বেতন দেওয়ার পালা। টাকা আসবে কোথায় থেকে? আবারো মা সহায়।  মায়ের দুটি মুরগি ছিল, তার ডিম বিক্রি করেই আমার স্কুলের বেতন দেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়।

দেখতে দেখতে চলে আসে অর্ধবার্ষিকী পরীক্ষা। এই পরীক্ষায় তিন বিষয়ে অকৃতকার্য হই আমি। এজন্য আমি নিজেই দায়ী। ভালো করে পড়াশোনা করতে পারিনি।

এরপর আবার ক্লাস শুরু হলে পড়াশোনায় মনযোগ দেওয়ার চেষ্টা করি। এক সময় চলে এল বার্ষিক পরীক্ষা। কয়েক মাসের বেতন আর পরীক্ষার ফি দেওয়ার জন্য শিক্ষকরা চাপ দিচ্ছিলেন তখন।

বাবাকে বললাম। জানি লাভ নেই। কারণ বাবার দৈনিক আয় তিনশত টাকা। সংসার চালিয়ে আমাকে দেওয়ার মতো কিছুই নেই তার। তখন মনে হলো পরীক্ষাটা আর দেওয়া হবে না আমার। 

মা তখন আবারো পাশে এসে ভরসা দিলেন। বললেন মুরগি বিক্রি করে দেবেন। যেই কথা সেই কাজ। মায়ের মুরগি বিক্রি করা টাকা দিলাম স্কুলে। এবার পরীক্ষায় এক বিষয়ে অকৃতকার্য হলাম। কিন্তু পরের ক্লাসে উঠে আরো বেশি মন দিয়ে পড়ালেখা শুরু করলাম। মায়ের অদম্য ইচ্ছেতেই চলল আমার পড়ালেখা। এভাবেই কেটে যায় দুই বছর।

চলে আসে জেএসসি। অষ্টম শ্রেণিতে উঠলে নিবন্ধন করতে হয়। তখন বেশ কিছু টাকার দরকার হয়। এবারও মা আর তার মুরগিই সহায়। মুরগি বিক্রির টাকায় আমি জেএসসির নিবন্ধন করলাম। পরীক্ষা হলো, পাশও করলাম। জেএসসিতে পাশ করায় মা খুব খুশি হলেন। আমার চেয়েও বেশি খুশি হলেন তিনি। যে মা না থাকলে পঞ্চম শ্রেণির পর আর পড়ালেখাই করা হতো না সে মায়ের জন্যই বড় হতে চাই, জীবনে সফল হতে চাই।

এ সম্পর্কিত খবর

No stories found.

সর্বাধিক পঠিত

No stories found.
bdnews24
bangla.bdnews24.com