তারপর শুরু হতো হাতে মেহেদি দেওয়ার জন্য বড় আপুদের পেছন পেছন ঘোরা। গাছ থেকে মেহেদি তুলে একজন পাটায় বাটত আর আমরা ছোটরা গোল হয়ে বসে থাকতাম। ঈদের চাঁদ দেখার জন্য দলবল নিয়ে ছোটাছুটি করতাম। ঈদের আগের রাত এত দীর্ঘ ছিল শুধু মনে হতো কখন সকাল হবে!
সকাল হতেই বাবার সাথে খালে গোসল করতে যেতাম। মা নতুন কাপড় পরিয়ে দিতেন আর তার হাতের সেমাই খেয়ে ঈদের মাঠে যেতাম।
নামাজ পড়ে সবাইকে সালাম করতে বাড়ি ফিরতাম। হাতে থাকত চকচকে নতুন টাকা। একবার ঈদের সালামি দিয়ে সেভেন আপ কিনতে গেছি দোকানে। গিয়ে দেখি সদ্য নির্বাচিত চেয়ারম্যান সাহেব সবার সাথে কুশল বিনিময় করছেন। এরমধ্যে তাকে পায়ে হাত রেখে সালাম করে নিলাম। তারপর আমাকে অবাক করে চকচকে একটা ১০০ টাকার নোট হাতে দিলেন। সেবার সবচেয়ে বেশি সেলামি পেয়েছি আর ওটাই ছিল জীবনের বড় সেলামি। ঈদের সে কী আনন্দ ছিল! এক খালাম্মা ঈদে জুতা উপহার দিয়েছিলেন সেবার। এত খুশি হয়েছিলাম যে সেটা বুকে জড়িয়ে ঘুমিয়েছি। বড় হবার সাথে সাথে সেই আনন্দ হারিয়ে যায়।
এখন নতুন কাপড়ের বায়না নেই। হাতে মেহেদি দেই না অনেক বছর, ঈদের সকালের জন্য তাড়াহুড়ো নেই। হাত ভরা সেলামিও পাই না।
তবে এবার প্রথমবার পঞ্চগড়ে নিজের ভিটে মাটিতে চাচা, চাচাতো ভাই-বোন আর পরিবারের সাথে ঈদ ভিন্নভাবে কাটল। তাছাড়া আমার ঈদের আনন্দ বাড়িয়ে দিয়েছে বেসরকারি সংগঠন ডু সামথিং নামের একটি ফাউন্ডেশন। তারা আমার উপর আস্থা রেখে রোজার ঈদে ২০ জন মানুষের জন্য এক হাজার টাকা মূল্যের উপহার বিলিয়ে দেওয়ার দায়িত্ব দেয়। এসব ঈদ উপহার দরিদ্র মানুষের হাতে তুলে দিতে পেরে আমি আনন্দিত। মাথায় হাত বুলিয়ে আমার জন্য দোয়া করে দিয়েছেন সবাই। আমি যেন ঈদের আনন্দ আবার ফিরে পেয়েছিলাম এবার।