পাঠক্রম অনুযায়ী যেদিন এই অধ্যায়টা পড়ানোর কথা সেদিন শিক্ষক আমাদের বললেন এটা বাড়িতে পড়ে নিতে। গার্হস্থ্য ক্লাসে কোনো ছেলে ছিল না, যে শিক্ষক পড়াতেন তিনিও নারী। তবুও ক্লাসে তিনি আমাদের বলেছিলেন এই অধ্যায়টা বাসায় পড়ে নিতে। যদিও আমি মনে করি প্রজনন স্বাস্থ্যের এই বিষয়গুলো ছেলেমএয়ে সবারই জানা উচিত।
যখন উনি এই অধ্যায়টা বাসা পড়ে নিতে বললেন তখন ক্লাসজুড়ে চাপা হাসি চলছিল। ক্লাসের পরই ছিল মধ্যাহ্ন বিরতি। তাই সবাই মিলে আড্ডা শুরু করলাম। বিষয় ঋতুস্রাব বা মাসিক। আমার এক বান্ধবী জানাচ্ছিল তার অভিজ্ঞতার কথা। এই সময়ে দেহে কী কী পরিবর্তন ঘটে, মনে কী ধরনের পরিবর্তন হয়, এতে যে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই এমন কিছুই নাকি জানায়নি তার মা।
বাবা বা ভাই তো দূরের কথা। ক্লাসেও এমনভাবে আলোচনা হচ্ছিল যেন তা অন্য মেয়েরাও শুনতে না পায়। আমার সব বান্ধবীদের গল্পগুলো ছিল ঠিক একই রকম। অর্থাৎ এসব নিয়ে কারো সাথে কথা বলাই যেন নিষিদ্ধ।
আমাদের এমন অনেক অভিভাবক আছেন যারা মাসিক নিয়ে সন্তানের সাথে খোলাখুলি আলোচনা করেন না বরং মাথায় ঢুকিয়ে দেন নানাবিধ কুসংস্কার। যেমন এ সময় ছেলেদের সাথে মিশবে না, সাবধানে থাকবে, আবার প্যাড ব্যবহারের বদলে হাতে তুলে দেন সুতি কাপড়।
এসব ভুল ধারণা একটি মেয়ের জন্য কখনো সুফল বয়ে আনে না বরং আতঙ্কিত করে তোলে। যার জন্য শারীরিক, মানসিক অনেক ক্ষতি হতে পারে। তাই প্রতিটা পরিবারের বাবা-মা যদি ছেলেমেয়েদের সঙ্গে মাসিক নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা করেন, তবে হয়ত এ বিষয়ে আরো সচেতনতা বাড়বে।
এটি কোনো অভিশাপ নয় বা নিষিদ্ধ কোনো আলোচনার বিষয় নয়। মেয়েদের সাথে আলোচনার পাশাপাশি এসব বিষয়ে ছেলেদের সাথেও আলোচনা করতে হবে। তাহলে প্রতিটি নারীর জন্য মাসিকের ব্যাপারটা হবে স্বস্তিদায়ক।