প্রতিদিন টিভির সামনে বসে আক্রান্ত ও মৃত্যুর হালনাগাদ শুনতাম। এক পর্যায়ে স্বজনদের আক্রান্ত হওয়ার খবর পেয়ে নিজেকে শক্ত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। এত কিছুর মধ্যেও এখনো সুস্থ আছি এটাকে সৃষ্টিকর্তার আশীর্বাদ মনে করি আমি।
সময়ের সঙ্গে ধীরে ধীরে নতুন স্বাভাবিক জীবনযাপনে অভ্যস্ত হয়ে উঠছি। আগে ঘুম থেকে উঠেই স্কুলের বাসের সময় ধরে বাসা থেকে বের হওয়ার প্রস্তুতি নিতাম। সেই জায়গায় এখন দিন শুরু হয় মোবাইল ফোনে চোখ বুলিয়ে।
সারাদিনের বিভিন্ন অনলাইন ক্লাস, বন্ধুদের সাথে গ্রুপ স্টাডি কিংবা আড্ডা সব সময়সূচি মিলিয়ে দিনের পরিকল্পনা করে নিই সকালেই।
বাবাকে অফিসে গিয়ে কাজ করতে হচ্ছে ঠিকই, কিন্তু আমার আর ভাইয়ের অনলাইন ক্লাস, মায়ের টিউশন- সব চলছে ঘরে বসেই ল্যাপটপ কিংবা মোবাইল ফোনে। এখন এক সঙ্গে খেতে বসলে বা গল্প করতে বসলে নিজেদের অভিজ্ঞতা ভাগাভাগি করা, পুরনো দিনের স্মৃতিচারণ করা, পারিবারিক বিভিন্ন অনুষ্ঠান বা বেড়ানোর ছবি দেখা, স্বজনদের খোঁজখবর নেওয়া, এছাড়াও দেশ-বিদেশের সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক নানা বিষয়ে আলাপচারিতা করেই সময় কাটছে।
বই পড়া, টুকটাক রান্না, নিজের ভালো লাগার বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গুগল কিংবা ইউটিউবে খোঁজ করা, বিকেলে আয়েশ করে আড্ডা দিতে দিতে চা খাওয়া -এসবেরও সুযোগ করে দিয়েছে এই দীর্ঘ অবসর। সময়টা স্বস্তিদায়ক নয়, তবে কিছু ব্যতিক্রম ছাড়া পরিবারের সবার সঙ্গে থেকে কঠিন সময় পার করার মানসিক শক্তি পাচ্ছি।
ঘরে বসে অনেকেই সৃজনশীলতা প্রকাশ করছে, অনেকে আবার সফলও হচ্ছে নানাভাবে।
আমি মুজিববর্ষ উপলক্ষে নানা কুইজ ও রচনা প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণ করেছি এবং পুরষ্কারও পেয়েছি। এছাড়া বিভিন্ন সংবাদমাধ্যম, ম্যাগাজিনে লেখা পাঠাচ্ছি। নিজের লেখা প্রকাশ হওয়ার পর সেটা দেখে বেশ উৎসাহ আর অনুপ্রেরণা পাই।
এছাড়াও স্কুলের কয়েকজন বন্ধুর সঙ্গে বই লেখার কাজও করেছি। ইতোমধ্যে একটি বই প্রকাশও করতে পেরেছি। আমাদের বই লেখার কাজ দেখে স্কুলের শিক্ষকরা তো প্রশংসায় পঞ্চমুখ।
সবকিছু ছাপিয়ে আসলে নিজেকে আত্মপর্যালোচনার সুযোগ পেয়েছি। নিজের কী করতে ভালো লাগে, আমি আমার আশপাশের মানুষ নিয়ে কতটা ভাবি কিংবা আমাকে নিয়ে কে কতটা ভাবে-এমন অনেক প্রশ্নের উত্তর পেয়েছি এই দুঃসময়ে।